সুজন মাহমুদ, লালপুর (নাটোর): “পড়াশোনার কোনো বয়স নেই” এ যেন আবার নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরলেন চায়ের দোকানদার আব্দুল হান্নান। বয়স তার ৪০ ছইছুই। আজ থেকে ২৫ বছর আগে ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি তিনি। তবে হাল ছেড়ে দেননি। নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবে রুপ দিতে এ বছর নাটোরের লালপুর থেকে মেয়ে হালিমা খাতুনের (১৫) সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন আব্দুল হান্নান।
আব্দুল হান্নানের বাড়ি লালপুর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। তিনি রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে লালপুর থানা বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন। আর তার মেয়ে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলের মানবিক শাখা থেকে লালপুর শ্রীসুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৃথক দুই কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা দিচ্ছেন বাবা-মেয়ে। পরীক্ষা শেষে কথা হয় আব্দুল হান্নানের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। এরপর আর পড়াশোনা চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। গোপালপুর রেলগেটে শুরু করেন চায়ের দোকানদারি। সেই দোকানের আয় ও জমিজমা চাষ করে স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার জীবনে বেশ ভালো আছেন বলে জানান তিনি।
তাহলে এই বয়সে আবারও পড়াশোনা কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ছাত্র জীবনের এসএসসি পাশের প্রবল ইচ্ছা দিনে দিনে তার মধ্যে প্রবল থেকে প্রবলতর হতে থাকে। এজন্য ২০২১ সালে তিনি উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম (ভোকেশনাল) শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
মেয়ে হালিমা খাতুন বলেন, আমার বাবাকে দেখে অন্যরা পড়াশুনায় অনুপ্রাণিত হবে। তাই বাবার সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গর্ববোধ করছি।
কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই, তার উদহারণ বয়োজ্যেষ্ঠ পরিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান। আবার তার মেয়েও এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এতে অন্যরা শিক্ষাগ্রহণে অনুপ্রাণিত হবে।
#এসএ