৭৩ বছরে মাত্র তিন সিনেমায় সীমাবদ্ধ ‘ভাষা আন্দোলন’ 

মাতৃভাষা প্রত্যেকটি জাতির জাতিসত্তা বিকাশের অনবদ্য মাধ্যম। মাতৃভাষা ব্যতীত আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা সমৃদ্ধ হয় না। তাই পৃথিবীর প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীই তার মাতৃভাষাকে মর্যাদা দিয়ে থাকে। তবে মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঝরিয়ে দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। একমাত্র বাঙালিরাই এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দিনটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী ইতিহাস ও ঘটনানির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ বেড়েছে। পাশের দেশ ভারতের নির্মাতারা তাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সময় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন এবং সেগুলো ব্যবসা সফল হচ্ছে। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্তিতে আমাদের হাতে রয়েছে মাত্র তিনটি সিনেমা, যার কোনোটাকেই উল্লেখযোগ্য বলা যায় না। 

প্রথমটি ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন থেকে নেয়া’। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান পরিচালিত ও প্রযোজিত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, আনোয়ার হোসেন, শওকত আকবর, রোজী সিদ্দিকী, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিলের মতো তুখোড় অভিনয়শিল্পীরা।

ভাষা আন্দোলন নিয়ে পরের ছবিটি হয় ২০০৬ সালে। নাম ‘বাঙলা’। এটি নির্মাণ করেন শহীদুল ইসলাম খোকন। এর তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ, চিত্রনায়িকা শাবনূর ও তৎকালীন শীর্ষ খল অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি। আরও ছিলেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি, ফখরুল ইসলাম, উপমা, আহসানুল হক মিনু, মিল্টন খন্দকারসহ অনেকে।

২১ ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপটে সবশেষ সিনেমাটি ২০১৯ সালে মুক্তি পায়, সে ছবির নাম ‘ফাগুন হাওয়ায়’। অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। এখানে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সিয়াম আহমেদ, নুসরাত ইমরোজ তিশা, আবুল হায়াত, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফজলুর রহমান বাবু ও ভারতের যশপাল শর্মাসহ অনেকে। ছবিটি প্রযোজনা করেন ফরিদুর রেজা সাগর। ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমাটি খুব বেশি মানুষ দেখেছে বলা যায় না। তবে যারা দেখেছে প্রশংসা করেছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উৎসবে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা নির্মাণ আগে থেকে কিছুটা বাড়লেও ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমার কথা শোনা যায়নি। তবে বেশকিছু প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে। সরকারিভাবে ‘হূদয়ে একুশ’ ও ‘বায়ান্নর মিছিল’ নামে ডকুমেন্টারি বানানো হয়েছে।

তাছাড়া গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী ইতিহাস ও ঘটনানির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ বেড়েছে। অথচ ভাষা আন্দোলনের মতো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে গত ৭৩ বছরে মাত্র তিনটি ছবি কেন নির্মিত হলো, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে আজকের এই দিনে। 

এদিকে টিভি চ্যানেলগুলোতেও প্রতি বছরে প্রচার হয় ভাষা আন্দোলন নিয়ে দুই-একটি নাটক। অথচ বাঙালির কাছে গুরুত্বহীন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে অসংখ্য নাটক প্রচার করে চ্যানেলগুলো। দেশের একটি জাতীয় দিবস নিয়ে সর্বমহলের এমন উদাসীনতা ইতিহাস থেকে দূরে রাখবে নতুন প্রজন্মকে- অন্তত এমনটাই মনে করছেন ইতিহাসবোদ্ধারা।