যেভাবে ফরিদা পারভীনের সঙ্গীতাঙ্গনে আসা

বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনের বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন। লালন সঙ্গীতের জন্য অধিক জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। গুণী এই শিল্পী ‘লালনকন্যা’ ও লালন সম্রাজ্ঞী হিসাবেও পরিচিত। তার ৫৫ বছরের অনবদ্য সঙ্গীতজীবনে তিনি সুরের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন ভক্ত ও শ্রোতাদের হৃদয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংলা সঙ্গীতের সুর ও লালনের বাণী। 

যেভাবে সঙ্গীতে আসা

ফরিদা পারভীনের পরিবারেই ছিল সংগীত চর্চার পরিবেশ। গান করতেন তার দাদি। গানের প্রতি তার বাবার ছিল গভীর অনুরাগ। সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে। ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রাজশাহী বেতারে নজরুলশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ফরিদা পারভীন।

শুরুতে গেয়েছেন নজরুল সংগীত, আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গান। তার মধুর কণ্ঠে গাওয়া ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানটি এখনো ছুঁয়ে যায় সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়। মুক্তি সংগ্রামে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর কুষ্টিয়ায় পারিবারিক বন্ধু মোকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনগীতির তালিম নেন ফরিদা। পরে খোদাবক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, ইয়াছিন সাঁই, করিম সাঁইসহ আরও অনেকের কাছে লালনের গান শিখে তিনি হয়ে ওঠেন ‘লালন সম্রাজ্ঞী’। 

তার কন্ঠে গাওয়া ‘এই পদ্মা, এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে প্রেমের কী সাধ আছে বল’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘বাড়ির পাশে আরশি নগর’, ‘মিলন হবে কতো দিনে’ ইত্যাদী গানগুলো গেঁথে গেছে সংগীতপ্রেমী শ্রোতাদের অন্তরে।

সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩, ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটির জন্য), এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদাপূর্ণ ফুকুওয়াকা পুরস্কার (২০০৮)।

১৯৫৪ সালে নাটোরের সিংড়ায় জন্ম নেন ফরিদা পারভীন। পৃথিবীর সমস্ত মায়া ত্যাগ করে সবশেষ শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭১ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে লালনসঙ্গীত হারাল এক সুধাময় মোহনীয় কণ্ঠ, আর বাঙালি হারাল এক সাংস্কৃতিক সম্পদ।