চিরতরে ঢাকা ছেড়ে শেষবারের মতো কুষ্টিয়ার পথে ফরিদা পারভীন

দেশবরেণ্য লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন দীর্ঘদিন কিডনি রোগের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। বৃষ্টির মধ্যে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে শহীদ মিনারে ঢল নামে অগণিত ভক্ত-অনুরাগীদের।       

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জোহর নামাজের পর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জানাজা শেষে ঢাকা ছেড়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছে ফরিদা পারভীনের মরদেহ। গায়িকার পরিবার জানিয়েছে, কুষ্টিয়ায় দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাকে কুষ্টিয়ার পৌর কবরস্থানে দাফন করা হবে। 

রোববার (১৪ সেপ্টেস্বর) শেষবারের মতো ফরিদা পারভীন যাচ্ছেন কুষ্টিয়ায়। তবে আগের যাওয়া আর আজকের যাওয়ার মধ্যে যোজন যোজন ফারাক! হ্যাঁ, নিথর দেহে শেষবারের মতো কুষ্টিয়ায় যাচ্ছেন তিনি। লাশবাহী গাড়িতে চড়ে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে রওনা হয়েছেন এই শিল্পী। সঙ্গে রয়েছেন পরিবারের সদস্য ও কিছু আত্মীয়-স্বজন।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ১০টায় প্রয়াত হন দেশের কিংবদন্তী লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। এরপর হাসপাতালে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ফরিদা পারভীনের শেষ ইচ্ছের বিষয়ে তার সন্তানরা বলেছিলেন, ‘আম্মার ইচ্ছে ছিল নানা-নানীর কবরে শায়িত হবেন। এছাড়া যখন আম্মা মাঝে চলাফেরা করতে পারতেন তখন উনি কুষ্টিয়া যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা কুষ্টিয়াতে নিয়ে যেতে পারি নাই। এছাড়া তার কোনও উইশ ছিল না।’

শিল্পীর ইচ্ছে অনুযায়ী কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে ফরিদা পারভীনকে শায়িত করা হবে। তবে তার আরেক ইচ্ছে অপূর্ণই রয়ে গেল, জীবদ্দশায় শেষবার যাওয়া হয়নি সেখানে, যাচ্ছে তার নিথর দেহ।

ফরিদা পারভীনের মরদেহ কুষ্টিয়া পৌঁছানোর পর সেখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে ফরিদা পারভীনকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।

গত ৫ জুলাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ফরিদা পারভীন। অবস্থার অবনতি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। কিছুটা সুস্থ হয়ে ২১ জুলাই তিনি বাড়ি ফেরেন। তবে ২ সেপ্টেম্বর ফের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতির কারণে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

সবশেষ শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম হয় ফরিদা পারভীনের। লন সংগীতশিল্পীর বাবা প্রয়াত দেলোয়ার হোসেন পেশায় ছিলেন সাধারণ চিকিৎসক। মা রৌফা বেগম। গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে ফরিদা পারভীনের পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। 

‎সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান তিনি। এছাড়াও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা রয়েছে তার। এছাড়া ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কারও পেয়েছেন। সেরা প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।