ফুটপাত উচ্ছেদে ফার্মগেটে দ্বিমুখী চিত্র পুলিশের

ফার্মগেট রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত একটি এলাকা। এ এলাকাকে অনেকে কোচিং নগরী হিসেবেও চিনে থাকেন। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি-ইচ্ছুক লাখো শিক্ষার্থী এই এলাকায় আসেন কোচিং করতে। ফলে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর আনাগোনায়  ফার্মগেট এলাকায় কোলাহল বাড়ে। এদিকে ফার্মগেটের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসে আছে বিভিন্ন দোকান। এতে পথচারী ও যান চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সড়ক যানজটমুক্ত ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগ নানা উদ্যোগ নিলেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশের নানা পরিকল্পনা। কারণ হিসেবে কেউ বলছেন মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কথা। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফার্মগেট এলাকার ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে গড়ে ওঠে কয়েক হাজার দোকানপাট। সরকার পরিবর্তনের পর ফুটপাত দখল করে দোকানের সংখ্যা আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি ডিএমপি সদর দফতরের নির্দেশে ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশ, হলিক্রস কলেজ রোড ও আনন্দ সিনেমা হলের সামনে ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ। অথচ গ্রিন রোড, আনন্দ সিনেমা হলের পশ্চিম পাশের রাস্তা, ইন্দিরা রোড, খামার বাড়ি ও তেজগাঁও কলেজের সামনের ফুটপাত এখনও বেদখল রয়ে গেছে। পুলিশের এমন দ্বিমুখী অবস্থানের কারণ জানেন না ট্রাফিক পুলিশ ও ফুটপাতের দোকানিরা।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দোকানপাট বসায় সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি হয়। পাশাপাশি যানজটের সৃষ্টি হয়। ডিএমপি কমিশনারসহ আমাদের ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশে আমার থানা এলাকার ফুটপাত ও সড়ক দখল করে রাখা অবৈধ সব দোকানপাট সরিয়ে দিয়েছি। শুধু উচ্ছেদই নয়, সব সময় নজর রাখছি, যাতে কেউ আবার দখল করতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, গ্রিন রোডের পশ্চিম পাশ, ইন্দিরা রোড ও খামার বাড়ি আমার থানার আওতাধীন না। ওই সব ফুটপাত ও সড়ক কেন দখলমুক্ত করা হচ্ছে না, এটা আমার জানা নেই। আমার থানা এলাকায় আর কখনও ফুটপাত ও সড়ক দখল হতে দেওয়া হবে না।

আর শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজ্জামেল হক বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। ফলে আমরা ফুটপাত ও সড়কে দখলমুক্ত করতে অভিযান চালাতে পারছি না। এ ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতনরাও বেশ উদ্বিগ্ন। তবে আমরা শিগগিরই ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযানে যাবো।

ফার্মগেট এলাকার ফুটপাতের এক পাশ উচ্ছেদ হয়েছে, সিংহভাগই এখনও বেদখলে রয়েছে। পুলিশের এমন দ্বিমুখী অবস্থান কেন, জানতে চাইলে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ফার্মগেট পুলিশ বক্সের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, এটা আমরাও জানি না কেন ফার্মগেট এলাকার ফুটপাতের এক অংশ উচ্ছেদ হয়েছে, আরেক অংশ দখলে রয়ে গেছে। তবে এটা পুলিশের ক্রাইম বিভাগের কাজ। তারা উদ্যোগ না নিলে সম্ভব নয়।

ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত বা উচ্ছেদ করা আসলে ট্রাফিক পুলিশের কাজ নয় মন্তব্য করে ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এ এফ এস তারিক হোসেন খান বলেন, এটা সিটি করপোরেশন ও পুলিশের ক্রাইম বিভাগের কাজ। কেউ যদি দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করে, তাহলে এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা নিরস্ত্র, আমাদের কাজ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানবাহনের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। এরপরও আমরা ফুটপাত উচ্ছেদ করে থাকি। তবে আবারও তা দখলে চলে যায়।

পুলিশের ক্রাইম বিভাগ এটা মনিটরিং করলে হয়তো সমাধন করা সম্ভব বলে মনে করেন এ এফ এস তারিক হোসেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফার্মগেট সুপার মার্কেটের সামনে থেকে গ্রিন সুপার মার্কেট পর্যন্ত পথচারীদের চলাচলের ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে কয়েক হাজার দোকানপাট রয়েছে। ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ডের দুটি সড়ক দখল করে জুতা, খাবারসহ নানা পসড়া সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

জানতে চাইলে ফার্মগেটের এক দোকানি বাবু বলেন, এক মাস আগে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে থেকে সব দোকান সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের সরানো জন্য কিছু বলেনি। আমরা অনেক দিন ধরে দোকান করছি। আগে আওয়ামী লীগের লাইমম্যানরা চাঁদা নিতো। তবে এখন কোনো চাঁদাবাজি নেই।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ফার্মগেট সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে তেজগাঁও কলেজের সামনের ফুটপাত ধরে হাঁটার কোনও উপায় নেই। ফুটপাত দখলের কারণে সিংহভাগ মানুষই রাস্তা ধরে হাঁটেন। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি বাড়ছে যানজট। কলেজের সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে খামারবাড়ি পর্যন্ত ফুটপাত ধরে হাঁটার কোনও উপায় নেই। সবাই সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী জান্নতুল ফৌরদোস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং শেষ হয়ে গেলে আর কখনও ফার্মগেট এলাকায় আসবো না। এখানে মানুষ চলাচল করার মতো কোনও পরিবেশ নেই। গতকাল আমার এক বান্ধবী সড়ক দিয়ে হাঁটার সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আবার ফুটপাত যেভাবে দখল থাকে, এতে হাঁটার কোনও উপায় নেই।

আরেক পথচারী বলেন, শুধু বিশেষ ছুটির সময় ফার্মগেটের ফুটপাত ধরে চলাচল করা যায়। এ ছাড়া আমি কখনও ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারিনি। ফুটপাত দখল করে অতিরিক্ত দোকানপাট থাকায় নারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। এই সরকার রাজনৈতিক সরকার নয়। তাই আমরা আশা করি, সরকার জনসাধারণের সুবিধাগুলো দেখবে।