কলম থেকে যেভাবে ক্যামেরার পথে হুমায়ূন আহমেদ

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন মূলত কলমের জাদুকর। তার গল্প-উপন্যাস পাঠককে বিমোহিত করেছিল, আর আজও ফেব্রুয়ারির বইমেলায় তার রচনার জন্য পাঠক মুখিয়ে থাকে। দুই বাংলার সেরা লেখকদের মধ্যে তিনি এক বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছেন।

যদিও হুমায়ূন আহমেদ মূলত লিখনীর জাদুতে পরিচিত ছিলেন, তার ছাপ পড়েছে টেলিভিশন নাটকেও। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে তিনি কখনো সরাসরি আগ্রহী হননি। সেই স্বপ্নটি জন্ম নেয় তার সহপাঠী ফিজিক্সের আনিস সাবেতের দ্বারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয়ের পর আনিস সাবেত হুমায়ূনকে চলচ্চিত্রের কল্পনা দেখান। বিদেশে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করে পুরস্কার জিতলেও, দেশে ফিরে আনিসের আকস্মিক মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদের মনে সেই স্বপ্ন ঢুকে পড়ে।

ভোরবেলায় স্ত্রী গুলতেকিনকে জানান ‘আগুনের পরশমণি’ ছবিটি বানানোর ইচ্ছা। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই উপন্যাসকে চিত্রনাট্যে রূপ দিতে শুরু করেন তিনি। রিসার্চ বাদ দিয়ে পুরো মনোনিবেশ করলেন সিনেমায়। অর্থের সমস্যা সমাধানে বন্ধু ও নাট্যাভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের সাহায্য পান, এবং সরকারী অনুদানের মাধ্যমে ছবি তৈরি সম্ভব হয়।

সিনেমার চরিত্র বাছাই থেকে সহকারী পরিচালক, সম্পাদনা ও সংগীত পরিচালক নিযুক্তি সব কিছুতেই হুমায়ূন নিজের মনোনীত ব্যক্তিদের নির্বাচন করেন। এভাবে তৈরি হওয়া ‘আগুনের পরশমণি’ ১৯৯৪ সালে মুক্তি পেয়ে দর্শকের মন জয় করে।

হুমায়ূন আহমেদ তার ক্যারিয়ারে মোট আটটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন: আগুনের পরশমণি (১৯৯৪), শ্রাবণ মেঘের দিন (২০০০), দুই দুয়ারী (২০০১), চন্দ্রকথা (২০০৩), শ্যামল ছায়া (২০০৪), নয় নম্বর বিপদ সংকেত (২০০৭), আমার আছে জল (২০০৮), ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২)

কলমের জাদুতে সবার মনে জায়গা করে নেওয়া হুমায়ূন আহমেদ চলচ্চিত্রের জগতে নাম লেখাতে গিয়ে দেখালেন, স্বপ্ন আর মেধার সংমিশ্রণে যেকোনো মাধ্যমেই মানুষ সফল হতে পারে।