সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বা আলট্রা ভায়োলেট রে মূলত তিন ধরনের- এ, বি এবং সি। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির (ইউভি) সহনশীল সূচক মান ধরা হয় ৫, কিন্তু শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকায় এ সূচক মান ছিল ১২। ফলে সূর্যের এই রশ্মি মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিবেগুনি রশ্মি পাখির চোখের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। অতিবেগুনি রশ্মির পাশাপাশি তাপপ্রবাহের কারণেও হুমকিতে রয়েছে পক্ষিকুল। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। বাচ্চা ফোটানোর প্রক্রিয়ায় ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তা দেয় মা-পাখি। সেখানে দেশে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেটিকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের চেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে পক্ষিকুলের জন্য। কারণ গবেষণা বলছে, মানুষ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় প্রজাতিভেদে পাখির চামড়া ১০-১০০ গুণ পর্যন্ত পাতলা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখি গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো প্রাণীর জন্য অতিবেগুনি রশ্মির সহনশীল মাত্রা কত, সেটি এখনো সঠিক জানা যায়নি। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী আরো গবেষণা প্রয়োজন। মানুষের তুলনায় পাখির চামড়া বহুগুণ পাতলা হওয়ায় তাদের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া পাখিরা কম-বেশি ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ডিমে তা দিয়ে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশে ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। যেটি ডিম থেকে পাখির বাচ্চা ফোটানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে। নানা কারণে গাছসহ পাখির অভয়াশ্রম কমে যাওয়ায় এ সমস্যা আরও তীব্র হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার মতে, অতিবেগুনি রশ্মির মান সূচক ৫-এর বেশি হলেই সেটি ঝুঁকি তৈরি করে। সংস্থাটি বলছে, ২ বা তার নিচে হলে এটি স্বাস্থ্যসম্মত। ৩-৫ হলে পরিমিত। ৬-৭ হলে উচ্চ, ৮-১০ হলে খুবই উচ্চ এবং ১১ বা তার বেশি হলে সেটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, উন্নত বিশ্বে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি নিয়ে সচেতনতা রয়েছে। সেখানে সূচক মান আড়াই পর্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত ধরা হয়। আর সূচক মান ৫ পর্যন্ত সহনশীল। কিন্তু এর বেশি হলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বর্ণনা করা হয়। তাই আমাদের এখানে এ বিষয়ে সচেতনতা এবং মান সূচক নিয়ে আরও কাজ হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ অতিবেগুনি রশ্মির কারণে মানুষের স্কিন ক্যান্সারসহ নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বিগত ৫০ বছরে দেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এর সঙ্গে আনুপাতিক হারে কমেছে পাখির অভয়াশ্রম।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বলছে, ১৯৯৫-২০২৩ সালের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় নগর অঞ্চলের সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ৫২ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ২৯ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটারে নেমে এসেছে। পুকুর ও জলশায় কমে যাওয়ায় দিন দিন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। কমছে খাওয়ার পানির উৎস, যা অন্যান্য প্রাণীকেও বিপদে ফেলছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। এমন গাছ লাগাতে হবে, যেগুলো ছায়া দেবে, তাপ কমাবে, দূষণ কমাবে, একই সঙ্গে পাখির বাসস্থান হবে।
তিনি বলেন, ৩৯৪টি প্রজাতির উপর গবেষণায় দেখা গেছ, পাঁচটি বৃক্ষ প্রজাতি দেশে বিলুপ্তপ্রায়। ১২৭টি প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে৷ ২৬২ টি প্রজাতি সংকটাপন্ন। তাহলে আমাদের ৩৯৪টি প্রজাতির মধ্যে সবক’টিই প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। মানুষ ও পশুপাখিসহ প্রাণিকুল বাঁচাতে হলে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে।