তিস্তায় দেখা মিলল বিরল পাতি মার্গেঞ্জারের

বহু অচেনা পাখির ভিড়ে এবার তিস্তায় দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির পাখি পাতি মার্গেঞ্জারের। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয়বারের মতো তিস্তা নদীতে দেখা মিলে এ পাখির। খবর বাসস’র।

পরিযায়ী এ পাখি দেখতে অনেকটা রাজহাঁসের মতো। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা কমলা রঙের। ডানা ধূসর, সাদার মিশ্রণ। 

কয়েক বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা একবার এ প্রজাতির পাখি তিস্তায় দেখেছিল। তিস্তা নদী এবং নদীর চরে এখন পাতি মার্গেঞ্জারের মতো বিচরণ করছে অগণিত পরিযায়ী পাখি। এর কোনোটা হাজার মাইল দূর থেকে এসে মোহনীয় করে তুলছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। তিস্তা এখন পরিযায়ী পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

শীতের শুরুতেই নদীর পাড়ে পরিযায়ী পাখির দলবেঁধে ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর ডুব সাঁতারের সুন্দর মুহূর্ত দেখে মুগ্ধ মাঝি, কৃষাণ-কৃষাণি ও স্থানীয় লোকজন। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়ন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে পিছিয়ে নেই দর্শনার্থীসহ শৌখিন আলোকচিত্রীরাও।

জানা গেছে, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর এপার-ওপার। এবারও পাখি আসছে। এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে পাখিগুলো। নদীতে শামুক, জলজ পোকামাকড় তাদের খাদ্য। তিস্তায় এসব খাদ্য পাওয়া যায় বলে এখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে পাখিগুলো।

দীর্ঘদিন ধরে পাখির ছবি তুলতে দেশ-বিদেশে ছুটে বেড়িয়েছেন নদী গবেষক ও শৌখিন আলোকচিত্রী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। শীতের এ সময়ে দেশে অতিথি পাখির আনাগোনা বাড়ে। ফলে পাখিপ্রেমীদের জন্য এ সময়টা দারুণ। তুহিন ওয়াদুদও পাখির ছবি তোলার জন্য বেছে নিয়েছে এ সময়টি। গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) নৌকায় করে তিস্তা নদীতে পাখির ছবি তুলেছেন। এ সময় ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে চোখে পড়ল দারুণ এক দৃশ্য। তিস্তার জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের দেশে বিরল পাখি পাতি মার্গেঞ্জার।

জানা যায়, পাতি মার্গেঞ্জার প্রবহমান নদী ও নালয় বিচরণ করে তারা স্রোতের বিপরীতে পানিতে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে। সেই সঙ্গে জলজ পোকামাকড়, ব্যাঙ, চিংড়ি, শামুকজাতীয় প্রাণিসহ লতাপাতা খায়। গাছের প্রাকৃতিক গর্তে এরা আবর্জনা ও কোমল পালকের স্তূপ বানিয়ে ৬ থেকে ১৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ পীতাভ। এরপর ২৮ থেকে ৩২ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

এদিকে, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর এপার-ওপার। এবারও পাখি আসছে। এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এ পাখিগুলো। নদীতে শামুক, জলজ পোকামাকড় তাদের খাদ্য। তিস্তায় এসব খাদ্য পাওয়া যায় বলে এখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে পাখিগুলো।

সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ চীন, লাদাখ থেকে এসব পাখি আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ হাঁস, ছোট কান প্যাঁচা, লম্বা পা তিসাবাজ, জিরিয়া, টিটি, মনকান্ড, চখাচখিসহ ৫০ থেকে ৫৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে নদীপাড়ে। তিস্তাকে যেন পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা যায় এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

এ ব্যাপারে সামাজিক বন বিভাগ রংপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রতি বছর শীতে নদীতে বিরল পরিযায়ী পাখিরা আসে। শিকারিদের হাত থেকে এসব পাখি রক্ষায় সামাজিক বন বিভাগের একটি টহল টিম বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।