বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মহীরুহ-তুল্য কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ১২ ভাদ্র নবজাগরণের প্রেরণার উৎস এই মহান সাধকের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
কাজী নজরুল ইসলাম একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীতজগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার সাড়া জাগানো কবিতা সঙ্কলন ‘অগ্নিবীণা’। কাব্যগ্রন্থটি বাংলার কাব্যভুবনে পালাবদল ঘটাতে সক্ষম হয়। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ নিঃশেষ হয়ে যায়। পরে খুব দ্রুত আরও কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ‘বিদ্রোহী’, ‘কামাল পাশা’ ছাড়াও এই কাব্যগ্রন্থের ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘আগমনী’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘শাত-ইল্-আরব’ কবিতাগুলো তুমুল হৈচৈ ফেলে দেয় সর্বত্র। নজরুল গদ্য রচনার বেলায়ও ছিলেন স্বতন্ত্র চিন্তার। তার প্রথম গদ্য ‘বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’ ১৯১৯ সালে সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
নজরুলের সাহিত্যিক জীবনের অবসান ঘটে মাত্র ৪১ বছর বয়সে। এরপর তিনি নির্বাক হয়ে যান। জার্মান দার্শনিক নিৎসে লিখেছিলেন, বীর ও মহাপুরুষেরা যখন সাধারণের চাইতে অনেক ওপরে ওঠেন, তখন তারা এমন কিছু দর্শন করেন; যাকে আর বর্ণনা করা যায় না। তখন তারা বোবা হয়ে যান। কাজী নজরুলের ট্র্যাজিক নীরবতা হয়তো সে রকম কোনো সত্যদর্শনেরই অভিঘাত বা আঘাত। ফুলের জলসায় কবি নীরব, কিন্তু বাংলা কবিতা ও গানে তিনি এখনো কথা বলে চলেছেন।
নজরুল বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেগ্রহণ করেন। তার অরেক নাম দুখু মিয়া। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। স্বাধীনতার পরপরই কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে পুরো জাতি তাকে স্মরণ করবে। পাশাপাশি তাকে নিয়ে করা হবে নানা আয়োজন।