রাস্তার মাস্টার ॥ শারমিন রহমান

পর্ব-১০

ওর বুকের মাঝে মস্ত বড় একটা পাহাড় বসিয়ে দিয়েছে কেউ যেন। চারটা মেয়ে হওয়ার পর এবার যেন আভা একটু বেশি শান্ত। ঠাকুরকে ডাকতেও যেন ভুলে গেছে। প্রচণ্ড অভিমান বুকে নিয়ে নির্বাক সে। কিন্তু ব্যথাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা আভার নেই। পাশে ঘুমন্ত সত্য নারায়ণকে ডেকে তুললো আভা।

রাত ২টা। সত্য নারায়ণ হঠাৎ ডাকে ভয় পেয়ে যায়। লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে। আভার চিৎকারে ততক্ষণে সোনালী, কাবেরী, বেবি উঠে এসে মাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা আলোয় ওরা রক্ত, পানির স্রোতের সঙ্গে একটি মানব শিশুর মাথা বেরিয়ে আসতে দেখলো সোনালী। সত্য নারায়ণ কী করবে বুঝতে না পেরে দাইকে ডাকতে দৌড়ে যায়। সোনালী একটা বড় বাটি মানব শিশুর মাথার নিচে ধরে রাখে যেন মাটিতে পড়ে না যায়। 

আভার চিৎকারে সোনালী, কাবেরী ও কাঁদছে। এ যেন এক দুঃস্বপ্ন! কী ঘটছে চোখের সামনে কিছুই বুঝতে পারছে না ওরা। বাটিটা ধরে বসে আছে সোনালী। ভাই, নাকি বোন আসছে ওরা জানে না। মাথা ছাড়া আর কোনো কিছু পৃথিবীর আলোয় আসেনি এখনো। আভার করুণ আর্তনাদে এবার ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। মেয়েরা সবাই কাঁদছে। কতক্ষণ এভাবে বাটি ধরে বসে আছে সোনালী তার হিসেব নেই। দাইকে নিয়ে বাবা ফিরলে ওদের একটু দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়।

দাই সেই ছোট্ট মাথাটাকে টেনে তাকে বের করে আনলো পৃথিবীতে। এবং উল্টো করে ধরে রাখলো। সে কাঁদলো, তার অস্তিত্ব জানান দিলো পৃথিবীকে। 
আভা, সত্য নারায়ণ তার নাম রাখলো দীপ। দীপু। যে আলো ছড়াবে। প্রার্থনার আলো। কন্যা সন্তান হওয়ায় যে অশুভ দোষ দিয়েছিলো মানুষরা, সে দোষ কাটিয়ে আলো নিয়ে আসলো আভা আর সত্য নারায়ণের একমাত্র ছেলে দীপু... দীপ নারায়ণ নায়েক।

চলবে...