চার কবির কবিতা

ভাঙা ব্রিজের জোড়া ॥ জব্বার আল নাঈম

কোথাও হুইসেল বেজেই চলছে
কেউ একজন সাড়া না দিলে যেন থামবে না!

এদিকে আমার মৃত বাবা একটি ভ্যান ঠেলে যাচ্ছেন
কাঁচা রাস্তা, ভাঙা ব্রিজ, বিলের পর বিল
ঝড়-তুফান আর দুপুরের কড়কড়ে রোদ
নিমিষেই পার হয়ে যাচ্ছেন- কোনো বাঁধা ছাড়া।

কোথায় যাচ্ছেন কিছুই জানি না!

আমার মা ফুলের গন্ধে ঘুমিয়ে আছেন;
ক্লান্তিহীন বাবা ভ্যান টেনে যাচ্ছেন- বহুদূর, বহুদূর
এদিকে থেমে গেছে হুইসেলের শব্দ...
বহুদিন পর একটি ভাঙা ব্রিজ 
জোড়া লেগে গভীর নির্জনতার দিকে ছুটছে...


তারার শ্বাস ॥ মুসতাক মুকুল

রাতের আকাশে
আমি হঠাৎ শুনতে পেলাম
অদৃশ্য কোনো বীণার সুর—
যেন নক্ষত্রেরা ঘুম ভেঙে
অদেখা ভাষায় কথা বলছে।

আমি থেমে গেলাম,
কারণ সেই সুরের ভেতর
ছিল আমার নিজের নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনি—
কোনো অচেনা আলো
আমার বুকের ভেতর জমে উঠছিল
অপরিচিত স্বপ্নের মতো।

হাজার গ্রহ ঘুরছে
চক্রবৃত্তের অজানা খেলায়,
তবু প্রতিটি কক্ষপথে
আমি খুঁজে ফিরি এক বিন্দু আলো—
যাকে হয়তো একদিন নাম দেবো
‘চিরকালের অপেক্ষা’।

কখনো মনে হয় আমি এক ধূলিকণা,
অসীম মহাকাশে ভেসে আছি—
কোনো যাত্রী আমার দিকে তাকাবে,
আর আমি টিমটিম করে জ্বলে উঠবো
তার নিঃসঙ্গতার প্রদীপ হয়ে।

তুমি কি জানো,
প্রতিটি উল্কাপাতে আমি তোমার জন্য
একটা ইচ্ছা পাঠাই—
যেন একদিন তারার শরীরে
তুমি শুনতে পাও আমার হৃদস্পন্দন।

রাত শেষ হয়ে যাবে,
আকাশ নিভে যাবে হয়তো—
কিন্তু তারাদের শ্বাস যতদিন বেঁচে থাকবে,
আমি লিখে যাবো অনন্তের প্রান্তে
তোমার নামে একেকটি নক্ষত্র।


ম্রিতোষ তত্রাত্রের দুটি কবিতা

দূরত্ব
মাকে জড়িয়ে ধরতে না পারার সীমারেখায় শুয়ে আছি ঘাস
কুয়াশা জড়ানো রাতে
অথৈই অন্ধকার ফুটে আছে ফুলে
বাবলা গাছের তলে শুয়ে দেখি
চাঁদ নিভে গেছে আমাদের 

৮ ডিসেম্বর ২৩
আমি কি দেখিনি?
কি দেখেছিলাম!

কে যেনো ডাস্টারে মুছছে রাতের অন্ধকার
এমন মমতায় জড়িয়ে আছে অক্ষরগুলো

তুমি। আমার ভেতর এক জলজ উত্তাপ

দিনের দৈন্যতা ছিঁড়ে
সমুদ্র। জাহাজকে ঘিরে প্লাবিত হচ্ছে


কাবাব যার যা ইচ্ছে  ॥ রজত সিকস্তি

বর্ষাকালে অরণ্য যেও, অরণ্য তখন খোদার পার্লার হয়ে ওঠে সুবহে সাদেক থেকে স্তনবতী পর্যন্ত কেবল বৃষ্টি বৃষ্টি সাজগোজ আর মা মরা মহিষের দল গোত্তা খাওয়া কাটা ঘুড়ির মতো তলিয়ে যায় অরণ্যের পুরোনো সিন্দুকের ভেতর এই সব বৃহত্তর বিবাদ কেবল বর্ষাকাল এবং অরণ্য সম্মতিসহ মিলিত হলেই মিটে যেতে পারে–এর চেয়ে সুস্পষ্ট কোনো কেতাবে লিখতে পারেনি কেউ অরণ্যে গেলেই পৃষ্ঠাগুলো ঝকঝকে কাঁসার থালের মত পাঠযোগ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে