জালিয়াতির পরও বহাল তবিয়তে সমবায়ের সেই কর্মকর্তা

ক্ষমতার অপব্যবহার ও সিন্ডিকেট করে বদলী, পদোন্নতি বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন সমবায় অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী (পরবর্তীতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) বাবলা দাশ গুপ্ত। পদোন্নতি নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে মা-ভাইকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ‘সমবায়ের মাফিয়া’ হিসেবে কুখ্যাত বাবলা দাশ গুপ্ত তার ছোট ভাই সঞ্জয় দাশ গুপ্তকে ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেটে সমবায় অধিদপ্তরের তদন্তকারী পদে চাকরি দিয়েছেন। তার মা সাধনা দাশ গুপ্তের বিরুদ্ধেও সমবায়ের জমি, সম্পদ ও টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে। 

গুপ্ত পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকাসহ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ‘তালাশ’ অনুষ্ঠানেও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছিল।

এরপরই বাবলা দাশ গুপ্তের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে একাধিক সংস্থা। প্রতিবেদনকে ভিত্তি ধরে পরবর্তীতে কয়েকটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও প্রচার হয় সংবাদ। নিজেদের গা বাঁচাতে তদন্তের নির্দেশ দেন গুপ্তেরই আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা খোদ সমবায় অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা। আর তদন্ত চলমান অবস্থায় সদর দপ্তর থেকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে উচ্চমান সহকারী বাবলা দাশ গুপ্তকে। সেই সঙ্গে পছন্দসই অফিস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার সহোদর সঞ্জয় দাশ গুপ্ত ও নীতি রাণী পালকেও। 

সমবায় অধিদপ্তরের তদন্ত কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ১ জুলাই সঞ্জয় দাশ গুপ্তের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল/ফেইক বলে প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও রহস্যজনক কারণে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সনদ জালিয়াতি করে চাকরি নেওয়া সঞ্জয় দাশ গুপ্তের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, বরং তাকে নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদানের মাধ্যমে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে।

আরও জানা যায়, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সনদ জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে হাফিজুল হায়দার চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বিশ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। সরকারের কাছ থেকে সঞ্জয় দাশ গুপ্তকে নিয়মিত বেতন-ভাতা প্রদান করে তিনি অর্থের অপচয় করছেন। এই সিন্ডিকেটের শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

জানা গেছে, বাবলা দাশ গুপ্ত গত ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের পটিয়ায় এগারো লাখ বাষট্টি হাজার টাকায় জমি কেনে। যার বাজার মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে কক্সবাজারের উখিয়ার পালং মৌজায় আঠারো লাখ টাকায় জমি কেনে। যার বাজার মূল্য বাহাত্তর লাখ টাকা। বাবলা দাশ গুপ্ত রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ বনশ্রীর ৭ নম্বর রোডের বি-৮৭ ও বি-৮৮ প্লটের রেইনবো টাওয়ারের জমি কেনেন প্রদীপ দাশ গুপ্তের নামে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে পঞ্চান্ন লাখ টাকা। চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে বাবলা তার দ্বিতীয় স্ত্রী জয়শ্রী দাশের নামে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। যার বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকা। পাথরঘাটার খোয়াজনগরে ৫ গন্ডা জমি কেনেন। যার বাজার মূল্য ষাট লাখ টাকা। কাজির দেওড়ি ও জামালখানের মাঝখানের আসকার দিঘীর পশ্চিমপাড় এলাকায় নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবনের ৩টি ফ্ল্যাটের মালিক বাবলা ও তার ২য় স্ত্রী জয়শ্রী দাশ গুপ্ত। যার বাজার মূল্য দুই কোটি বিশ লাখ টাকা। তার দুইটি গাড়ি রয়েছে অন্যের নামে কেনা। রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় তিনি যে ফ্ল্যাটে বাস করেন তা তার বোনের নামে কিনেছেন। তার বড় ছেলে শৈবাল দাশ গুপ্তকে বিদেশে পড়াশোনা করান ও ছোট ছেলেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। বাবলা ও তার সিন্ডিকেট সমবায় অধিদপ্তরের অনেক পিয়নকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এতকিছুর পরও তিনি এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

জানা যায়, এসব বিষয় তদন্তের জন্য ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।