দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ইতোমধ্যে ২০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। তারা বলেছে, এই ২০ লাখের মধ্যে ৭ লাখ ৭২ হাজারের বেশি শিশু। তাদের জরুরি সহায়তার প্রয়োজন। শুক্রবার (২১ জুন) বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।
‘বন্যার পানি বাড়ার সময় শিশুরাই সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ডুবে মারা যাওয়া, অপুষ্টি ও মারাত্মক পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়া, বাস্তুচ্যুতির আতঙ্ক এবং জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে শিশুরা।’
ইউনিসেফ বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও মাঠপর্যায়ের অংশীদের সঙ্গে সমন্বয় ও অংশীদারিত্বে আমরা গত পাঁচ দিনের মধ্যে প্রায় ১ লাখ বন্যাকবলিত মানুষের কাছে নিরাপদ পানি বিতরণ করেছি। ১০ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩ হাজারের বেশি পানির পাত্র বিতরণ করেছি। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে তা মোকাবিলায় আমরা বিভিন্ন গুদাম থেকে জরুরিভিত্তিতে অতিরিক্ত জরুরি সরঞ্জাম আনছি।’
ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় নাজেহাল সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার মানুষ। তবে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে এসব নদ-নদীর পানি।
শুক্রবার সকাল ৯টায় সিলেট অঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন, সুরমা ও কুশিয়ারা এবং নেত্রকোণা অঞ্চলের সোমেশ্বরী নয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছিল। এর মধ্যে সাতটি পয়েন্টে পানি আগের দিনের তুলনায় কমেছে।
সিলেটের ১৩টি উপজেলায় ৬৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬১ আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। নদীর পানি কমতে শুরু করলেও সুনামগঞ্জ জেলার অধিকাংশ এলাকা এখনও পানির নিচে। এ জেলার ৬৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ২৩ হাজার ৮৪৯ জন।
বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বন্যার পানিতে পড়ে জেলা তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
সিলেট বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা ইতোমধ্যে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বন্যার কারণে। এ বিভাগ থেকে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীর এবার পরীক্ষা দেওয়ার কথা।
ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগে ৮১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে ডুবেছে। ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ১৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
‘কঠিন এই সময়ে সম্ভাব্য সহিংসতা নিরসনে এবং আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে শিশুদের সহযোগিতা করতে শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মীরা পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে।’