বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম, মাছের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী

কথায় আছে বাজারের দাম বাড়তে বিক্রেতাদের অজুহাতের অভাব হয়না। তাদের লক্ষ্যই থাকে যেনতেন প্রকারে ক্রেতার পকেট কাটা। কাঁচাবাজার তেমনি একটি যায়গা যেখানে অনায়াসে ক্রেতার পকেট কাটা সম্ভব। দিনকে দিন সেই ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে দেশের বিক্রেতারা। প্রতিবাদ করলেই সত্য-মিথ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

কোনভাবেই  দেশের কাঁচা বাজারের স্বস্তি ফিরছে না। সরকার পতন হয়ে নতুন সরকারের যাত্রা মাস পেরুলেও সাধারণ মানুষের জন্য কোন শুভবার্তা বয়ে আনেনি। উপরন্তু নানান অজুহাতে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। আগে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের কারণে এই দাম বাড়ছে বলে বিক্রেতারা বলতেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই ঘাটি উচ্ছেদ করেছে। চাঁদাবাজরা গা ঢাকা দিয়েছে আর সিন্ডিকেট তাদের কর্মকাণ্ড অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছে। তারপরেও বাজার দরে স্বস্তি ফেরেনি। এমনকি অনেক পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। যেমন গরীবের আমিষ বলে খ্যাত ডিমের বাজার এখন উর্ধমূখী। সেখানে অবশ্য ব্যবসাদারদের যুক্ত রয়েছে। তাদের কথায়, ইদানিং মুরগি তাদের ডিম পাড়া কমিয়ে দিয়েছে। আবার সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির পথে হাটতে চাইলেই বলা হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বেন। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টের কথা কোন পক্ষই আমলে আনতে চাচ্ছেন না।

এদিকে বন্যার পর হঠাৎ বৃষ্টির দোহাই দিয়ে কাঁচা মরিচের দাম এখন সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মঙ্গলবার রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৫শ টাকা পাল্লা। যা মহল্লায়  বিক্রি হচ্ছে কেজি সাড়ে চারশো টাকা পর্যন্ত। পাল্লা বলতে ৫ কেজি বুঝায়। তাই মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে কাঁচা মরিচ। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, কাঁচা মরিচের দাম আরও বাড়লে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ, আগের সরকারের আমলে কাঁচা মরিচের কেজি হাজার টাকা ছুঁয়েছিল। তাই কাঁচা মরিচ যদি আরো চোখ রাঙায় সেটি মেনে নিতে হবে আর তার জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

কী বলছেন বিক্রেতারা?

নিম্নচাপের প্রভাবে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাজারে কমেছে মরিচসহ অন্যান্য সবজির সরবরাহ। এতে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচের দাম। বিক্রেতাদের দাবি, টানা বৃষ্টিতে বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে, আর সরবরাহ কমায় দামও বাড়ছে জ্যামিতিক গতিতে। মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়

গরীবের নাভিশ্বাস:

এমনিতেই বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। তারওপর গত দুইদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে কমেছে পণ্যের সরবরাহ। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। এতে বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে। পাশাপাশি কমেছে পণ্য সরবরাহ। ফলে আগের কেনা মালামালই বিক্রি করতে হচ্ছে তবে তা বাড়তি দামে। কারণ, মাল পাব বা আসবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।

এদিকে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি গোল বেগুন ৯০-১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, করলা ৭০-৮০, ঢ্যাঁড়শ ৫০, বরবটি ৬০, মুলা ৫০, লতি ৬০-৮০, কহি ৬০ টাকা ও পটোল ৫০-৬০ টাকায়। তবে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে গাঁজর আর টমেটো। সিজন নাথায় টমোটো দাম বেশি এটি মেনে নেওয়া গেলেও গাঁজরের এমন দাম মানতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা। গতকাল ১৮০ টাকা কেজি দরে গাঁজর বিক্রি হতে দেখা গেছে। টমোটোর কেজি অবশ্য গাঁজরকে ছাড়িয়ে ২০০ টাকায় উঠেছে। এক সময়রে সবচেয়ে কমদামি সবজি পেঁপে এখন নিজেকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে গেছে। প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। যদিও এটি পাইকারি বাজারদর। কচুরমুখী ৬০, শিম ২০০ ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়; প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা।

আমিষের খবর:
অন্যদিকে গরুর মাংস বা খাসির মাংসের বিকল্প হিসেবে এতোদিন ব্রয়লার মুরগি কেনা গেলেও তার দামও বাড়তি। ক্রেতাদের অনুযোগ, কবে  ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা থামবে?

এদিকে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব ধরনের মাছের দাম। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০ টাকায়। এছাড়া চাষের পাঙাশ ২০০-২২০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০-২৮০ টাকায়, চাষের শিং প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকায়, কোরাল ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা, আইড় ৭৫০-৮০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে ইলিশ মাছের দেখা মিললেও দামে পোষাচ্ছে না। ২’শ গ্রাম থেকে শুরু করে একেিকজ ওজনের ইলিশ বাজারে  দেখা যাচ্ছে। তবে ২০০ গ্রামের ইলিশের দর হাকা হচ্ছে সাড়ে ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা কেজি। আর এককেজি ওজনের ইলিশের দাম হাকা হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২’শ টাকা পর্যন্ত। যদিও বলা হচ্ছে সব ইলিশই পদ্মার। কিন্তু চেহারা দেখে সেটি পদ্মার কিনা সেটি যাচাই করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কারণ, ইলিশের বিভিন্ন জাত বাজারে আমদানি হওয়ায় প্রকৃত ইলিশ চেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরেও যদি কেউ ইলিশ কিনতে যাচ্ছেন কিন্তু দাম শুনে তিনি ফিরে আসছেন। কারওয়ান বাজারের বাজার করতে আসা শেখ আযাদ যেমনটি বললেন। ইলিশ মাছতো চাষের নয় আর তার জন্য বাড়তি কোন যত্নও নিতে হয় না। আবার খাদ্যের জন্য নেই খরচ। তারপরেও ইলিশ মাছের দাম এমন বিষয়টি আমাদের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যের। তিনি বলেন, ভারতে মাছ রপ্তানি করা হবে না এই খবরে ভেবেছিলম, এবার হয়তো ইলিশ মাছ বাচ্চাদের মুখে তুলে দিতে পারব, কিন্তু না। বাজারে এসে হতাশ হচ্ছি তাই ইলিশের পরিবর্তে তেলাপিয়া কিনেই বাসায় ফিরছি।