আতঙ্ক কাটলেও এখনো কর্মস্থলে আসেননি ১৮৭ পুলিশ

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সবচেয়ে ‘নাজুক’ পরিস্থিতিতে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে গিয়ে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের কারণে সাধারণ মানুষের তীব্র ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়েছে এ বাহিনীকে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশের অন্তত চার শতাধিক থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। সেই সাথে হত্যা করা হয় অনেক পুলিশ সদস্যকে। এরপর থেকে অনেক পুলিশ সদস্য উধাও হয়ে যান।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার মাঝে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা পুলিশের। দেশের সব থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। 

পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮৭ জন সদস্য গত দুই মাসেও কর্মস্থলে যোগ দেননি। তাদের অনেকে এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যারা চাকরিতে ফিরতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে হওয়া ফৌজদারি মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ আইন অনুযায়ী চলছে।

সব মিলে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে এনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম বলেন, চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কাজ করছে। পুলিশও মাঠ পর্যায়ে তাদের স্বাভাবিক কাজ শুরু করেছে।

এদিকে ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তা।

এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত ১৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, পুলিশে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে যেসব পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি, লুকিয়ে আছেন, তাদের আর যোগ দিতে দেওয়া হবে না।

এরপর গত ১ অক্টোবর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যেসব পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগদান করেননি, তাদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে।’

কতজন পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি— এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ১৮৭ জনের মতো ছিল। এর পরে মনে হয় আর কেউ যোগদান করেননি। যারা যোগ দেননি, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। 

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, অনুপস্থিত থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) রয়েছেন ১ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি ৭ জন, পুলিশ সুপার ২ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১ জন, সহকারী পুলিশ সুপার ৫ জন, পুলিশ পরিদর্শক ৫ জন, এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন ও কনস্টেবল ১৩৬ জন।