আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার মিথ্যাচার!

গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মিথ্যাচার’ করেছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৫ ঘণ্টাপর আবু সাঈদকে হাসপাতালে নেয়ার ভুয়া দাবি করেছেন তিনি, যা আদৌ সত্য নয়। খবর রিউমর স্ক্যানার ডটকম’র।  

 শনিবার (২৩ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়। এতে তিনি ওই মিথ্যাচার করেন বলে ধরা পড়ে।

অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা দাবি করে বলেন, ‘আবু সাঈদ গুলি খাওয়ার পর তার সঙ্গী-সাথিরা যে তাকে টেনে নিয়ে গেল, কোথায় নিয়ে গেল? যার গুলি লাগবে, তাকে তো সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা। হাসপাতালে নিলে , অপারেশন করবে, বুলেট বের করবে, তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে। আবু সাঈদকে কিন্তু  হাসপাতালে নেয় নাই। নিয়েছিল চার-পাঁচ ঘণ্টা পরে। চার-পাঁচ ঘণ্টা পর হাসপাতালে নেওয়ার পর, ডাক্তাররা যখন চিকিৎসা করে, তখন সে মৃত্যুবরণ করে।’


আবু সাঈদকে নিয়ে গ্রাফিতি, সংগৃহীত

কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গুলিবিদ্ধ আবু সাঈদকে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর হাসপাতালে নেয়ার দাবি সঠিক নয়, বরং দুপুর ২.১৮ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিস্তেজ হয়ে রাস্তায় ঢলে পড়ার পরই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং ৩টার দিকেই রিকশা করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

গত ১৬ জুলাই দ্য ডেইলি স্টার-এ দুপুর ৪:০১ মিনিট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেদিন দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবু সাঈদ নিহত হন।

১৬ জুলাই সন্ধায় প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন বেলা ২টার দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আহত হন আবু সাঈদ। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওইদিন দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজে লাইভ ভিডিওতে ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে আবু সাঈদকে গুলিবিদ্ধ হতে, ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে তাকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে এবং ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে কয়েকজন ব্যক্তিকে তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। লাইভ ভিডিওর টাইমলাইন অনুযায়ী, আবু সাঈদ দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে নিস্তেজ অবস্থায় রাস্তায় ঢলে পড়েন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত (গত ১৬ জুলাই) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলন গতি লাভ করে।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আঁকা অসংখ্য দেয়ালচিত্রে আবু সাঈদের আত্মত্যাগ প্রকাশ পেয়েছে।