ঘোষণাপত্রের অনুপস্থিতিতে এ সরকার অবৈধ:  ফরহাদ মজহার

গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের অনুপস্থিতিতে সেনাসমর্থিত উপদেষ্টা সরকার বেআইনি ও অবৈধ বলে জানিয়েছেন লেখক, কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, ঘোষণাপত্র (Proclamation) জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং আইনি অনুষ্ঠান। 

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব হচ্ছে ঘোষণাপত্র এযাবৎকালে যে সকল ফ্যাসিস্ট আইন ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা জবরদস্তি কায়েম রাখা হয়েছে তাদের বৈধতা অস্বীকার করে এবং সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নতুনভাবে রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতির দেয়। ঘোষণাপত্র সেই দিক থেকে এক প্রকার গণ-অঙ্গীকারপত্র বা গণপ্রতিশ্রুতি। যার মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার পূর্ণ ক্ষমতা লাভ করে এবং  দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের বৈধতা অর্জন করে। একইভাবে ঘোষণাপত্র জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের আইনি ভিত্তি স্থাপন করে।

ওই পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি কয়েকটি স্পষ্ট কথা বলে এসেছি। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে একটি সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার গঠন করা হয়েছে অথচ এ ধরনের সরকারের কোনো সাংবিধানিক বা আইনি ভিত্তি নাই। অর্থাৎ জনগণের অভিপ্রায়ের বিপরীতে একটা অবৈধ সরকার জবরদস্তি কায়েম রাখা হয়েছে। আইন কিংবা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া উভয় দিক থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে এ ধরনের সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার গঠন সম্পূর্ণ অবৈধ, অযৌক্তিক এবং কাণ্ডজ্ঞান বিবর্জিত সিদ্ধান্ত। সতেরো কোটির অধিক জনগণ অধ্যুষিত বাংলাদেশের জন্য এটা ভয়ানক দায়িত্বহীন ও বিপজ্জনক। ইতোমধ্যেই বৈরী ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এই অবৈধ সরকার প্রকট বিপদ তৈরি করে রেখেছে। সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাপট ও দম্ভ তার প্রমাণ।’

গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র এমন একটি দলিল উল্লেখ করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘এটা পরিষ্কার গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র (Proclamation) গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার আইনি ও নৈতিক ভিত্তি স্থাপন করে। এটি জনগণের ইচ্ছার সার্বভৌম প্রকাশ এবং শাসনব্যবস্থার পুনর্গঠন ও সংস্কারের পথ দেখায়। গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র এমন একটি দলিল, যা জনগণের অধিকার, মর্যাদা এবং গণতান্ত্রিক ক্ষমতার রূপ নির্দেশ করে। এটি নিছকই শাসনতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক দলিল নয়, বরং নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পুনরায় গিঁট বেঁধে স্বাধীনতা, সাম্য, এবং মানবাধিকারকে মূর্ত ও বর্তমান করে তোলার প্রক্রিয়া। তাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুহূর্ত বাংলাদেশের জনগণের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন এবং বিশ্বসভায় শক্তিশালী স্থান অর্জন করবার ভিত্তি। 

ফরহাদ মজহার বলেন, আফসোস গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রছাত্রী তরুণদের দাবি মানা হচ্ছে না। যা গভীর রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে রেখেছে। এই সংকট এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নাই। 

গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র কেন জরুরি সেই বলতে গিয়ে ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বর্তমান বিপজ্জনক পরিস্থিতির একটি কারণ হতে পারে বাংলাদেশের আইনি বা সাংবিধানিক পর্যালোচনায় এবং সামগ্রিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণসার্বভৌমত্ব (Popular Sovereignty) প্রতিষ্ঠার বিষয়টি– বিশেষত ‘ঘোষণা’ (proclamation) কেন জরুরি সে সম্পর্কে  প্রকট অজ্ঞতা রয়েছে।  অথচ গণঅভ্যুত্থানের পরে গণঅভিপ্রায় ব্যক্ত করে দেওয়া ‘ঘোষণা’ গভীর আইনি এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে। গণঅভ্যুত্থানের মুহূর্ত বা সময় শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত নয়, বরং চূড়ান্ত ক্ষমতার উৎস হিসেবে জনগণের সার্বভৌম ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে ‘ঘোষণা’একটি নতুন গঠনতন্ত্র এবং সমাজ বিনির্মাণের ভিত্তি রচনা করে’। 

‘গণঅভ্যুত্থান সে কারণে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সাহিত্যে অভূতপূর্ব বিপ্লবী মুহূর্ত বা রুহানি ওয়াক্ত হিসেবে স্বীকৃত। গণঅভ্যুত্থান এমন একটি বিপ্লবী মুহূর্ত, যা জনগণের ঐক্য এবং সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রকাশ। এটি জনগণের চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটায় এবং জীবাবস্থা থেকে জনগণ নিজেদের সামষ্টিক রুহানি সত্তার স্বাদ আস্বাদন করে। এই সেই মুহূর্ত যখন ব্যক্তি সমষ্টির স্বার্থে শহিদী জীবন কবুল করে নিতে দ্বিধা করে না’।  

সবশেষ ওই পোস্টে তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের বেশকিছু আইনি এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য তুলে ধরেন।