যে কারণে সীমান্তে কাচের বোতল ঝুলিয়েছে বিএসএফ

সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় কাচের বোতল ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় গ্রামবাসী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরাই ওই কাচের বোতল ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে। তবে ওই খালি বোতল কেন ঝুলিয়েছে বিএসএফ তা নিয়ে আতঙ্কে স্থানীয়রা।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) জানা গেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্ত থেকে পাওয়া কিছু ছবিতে ছিল মদের খালি বোতল।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর নাগাদ ভারতের কোচবিহার জেলার বিএসএফ শিবির থেকে কয়েকজন সীমান্তরক্ষী কাঁটাতারের বেড়ায় ওই খালি কাচের বোতলগুলো ঝুলিয়ে দিয়ে যায়।

কেন কাঁটাতারের বেড়ায় বোতল?

এক বিএসএফ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কেউ বেড়া কাটতে চাইলে অথবা নাড়াচাড়া দিলে কাচের বোতলে শব্দ হবে বা সেটি পড়ে গিয়ে ভেঙে যাবে। সেই শব্দে কাছাকাছি থাকা বিএসএফ প্রহরী সজাগ হয়ে যেতে পারবেন-সেজন্যই এরকম একটা ব্যবস্থা। দিনের বেলার থেকেও রাতের অন্ধকারে প্রহরীদের সজাগ করার জন্য বেশ কার্যকর এটা।

তিনি বলেন, এটা পাকাপাকি ব্যবস্থা নয় কখনোই। স্থানীয়ভাবে এরকম নানা ব্যবস্থা করে নিতে হয় সীমান্তে-যেখানে যেরকম প্রয়োজন, সেখানে সেরকম ব্যবস্থা করতে হয়।

৫১ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম আলদীনকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে যে, এটি নতুন কোনো স্থাপনা নয়। বেড়াটির সুরক্ষার জন্যই তারা বোতল ঝুলিয়েছে। যদি কেউ রাতের আঁধারে বেড়া তুলে নিয়ে যায় সে জন্য তারা (বিএসএফ) শূন্যরেখায় বেড়া দিয়ে নিজেরাই দুশ্চিন্তায় আছে। এজন্য তারা এই প্রটেকশনটি ব্যবহার করেছে।

বিএসএফ বলছে, যেখানে জিরো লাইনের দেড় শ’ গজের মধ্যে কোনো ধরনের নির্মাণকাজ করা সম্ভব নয়, সেসব জায়গাতেই ভারতের অংশে এই সিঙ্গল রো ফেন্সিং বা এক-সারির বেড়া দেয়া হচ্ছে।

যেকোনো ধরনের কাঁটাতারের বেড়াই চোরাচালানকারীরা কেটে ফেলে অনেক ক্ষেত্রে। তাই এখন নতুন এক ধরনের কাঁটাতার ব্যবহার করা শুরু করছে বিএসএফ, যা কাটা প্রায় অসম্ভব, এমনটাই জানা গেছে বিএসএফ সূত্রে।

আবার অনেক সময়ে দেখা যায় সোনা, রুপো, ফেনসিডিল পাচারের জন্যও সীমান্তের একদিক থেকে প্যাকেট বেড়া টপকিয়ে অন্য দিকে ফেলে দেয়া হয়।

এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে সীমান্তের ওপরে দিয়ে কপিকলের সাহায্যে গরু একদিক থেকে উঠিয়ে দিয়ে অন্যদিকে নামিয়ে দেয়া হয়।

অবৈধভাবে মানুষ পারাপারের জন্যও ত্রিস্তরীয় বেড়ার ওপর দিয়ে মই লাগিয়ে দিয়ে সেটিকে সেতু হিসাবে ব্যবহার করার কথাও জানা যায়। এক্ষেত্রে কাঁটাতারের বেড়ার দু’দিকে দু’টি এবং বেড়ার ওপর দিয়ে আরেকটি মই ব্যবহার করা হয়।

এই অবৈধ পাচার এবং পারাপার আটকাতে সীমান্তের বেড়ারও অনেক ওপর পর্যন্ত নাইলনের জাল দেয়া হয়েছে, যা টপকানো কোনো মতেই সম্ভব নয় বলছে বিএসএফ।