অমর একুশে বইমেলা থেকে সরানো হলো অভিনেত্রী ও প্রকাশক মেহরান সানজানা কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত, নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের বই ‘চুম্বন’।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মেহরান নিজেই এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি জানান। তার পোস্টটি তসলিমা নাসরিন শেয়ার দিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে, রাতে মেহরান এক বাক্যের ফেসবুক পোস্টে জানান, ‘সব্যসাচী প্রকাশনী’র স্টলটি নাকি ভাঙচুর হচ্ছে!
জানা গেছে, বিকালে বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছিল গল্পগ্রন্থ ‘চুম্বন’। সোমবারই তসলিমা নাসরিন বইটির প্রচ্ছদ ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলেন।
মেহরান সানজানা তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বাংলা একাডেমির মেলার মাঠের দায়িত্বে যিনি আছেন আমাকে কল দিয়ে বললো তসলিমা নাসরিনের বই সরিয়ে ফেলতে। শাহবাগ থানার ওসিও একই কথা বললেন। বাধ্য হয়ে সরাতে হচ্ছে তসলিমা নাসরিনের চুম্বন বইটি।’
আর তসলিমা নাসরিন ওই পোস্টটি শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমি আমার বই মেলার সব স্টল থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল, আমাকেও মেলা প্রাঙ্গন থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছিল। আজ ৩২ বছর পরও বাংলা একাডেমি সেই একই জায়গায় রয়ে গেছে, এর কোনও উন্নতি হয়নি। এ এখনও শোধরায়নি।’
তসলিমা লেখেন, ‘বাংলা একাডেমি আজও মেলায় আমার বই নিষিদ্ধ করে, আমি যদি যেতাম মেলায়, আজও আমাকে সরে যেতে বাধ্য করতো। আজও লেখকের বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অথর্ব বাংলা একাডেমির অবস্থান। অসহিষ্ণু মৌলবাদি, যারা সন্ত্রাস করার হুমকি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আজও লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। লেখকের বই বইমেলায় নিষিদ্ধ করছেন। লজ্জা হয় না আপনাদের? অবশ্য লজ্জা থাকলে তো হবে।’
এর আগে মেহরান সানজানা সমাজ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তসলিমার বই প্রকাশ করায় তার ওপর বিভিন্ন মহলের চাপ আসছে।
বন্ধ হলো স্টল
সবশেষ, ‘তৌহিদী জনতা’ বলে দাবি করা একদল লোক ‘সব্যসাচী’র স্টলটির সামনে এসে উত্তেজনা প্রকাশ করে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া লাইভ ভিডিওতে তাদের সঙ্গে সব্যসাচী’র আরেক প্রকাশক শতাব্দী ভবকে (তিনি সানজানার স্বামী) তর্ক-বিতর্ক করতে দেখা যায়। পরে স্টলটি বন্ধ হয়ে যায়।
পরে বইমেলা কমিটির পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক সেলিম রেজা।
তিনি জানান, ‘ওই ঘটনার পর পুলিশের সহযোগিতায় মব থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি কোনো স্টল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি, কোনো বইও নিষিদ্ধ করেনি।’
রাত পৌনে ৯টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, “প্রকাশককে (শতাব্দী ভব) আমরা নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছি। তার বিষয়ে পরবর্তী আদেশের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি আমাদের কন্ট্রোলেই আছে। যারা এসেছিল তাদেরকে বুঝিয়েছি, তারা চলে গেছে।’