মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের ২৯ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাংলাদেশের দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন কোনো সংস্থাকে দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার (৩ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানায়, এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তির (ডেভেলপমেন্ট অবজেক্টিভ অ্যাসিস্ট্যান্স এগ্রিমেন্ট) আওতায় বাস্তবায়িত হয়।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, বাংলাদেশের দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে ইউএসএইড।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের দেশটির সরকারের অধীন একটি বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে ইউএসএইডের অর্থায়নে 'স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক ২৯ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ প্রকল্প নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অনুসন্ধান করে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে [২০১৭–২০২১] প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইউএসএইড যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে (ডিআই) নির্বাচন করে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পর স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটি নির্বাচিত হয়। ২০১৭ সালের মার্চে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডিআই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় এবং অর্থায়ন ধাপে ধাপে আসে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রকল্পের শুরুতে এসপিএল ছিল পাঁচ বছর মেয়াদি, যার বাজেট ছিল ১৪ মিলিয়ন ডলার।
এ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় ছিল ইউএসএইড এবং অর্থায়নে ছিল ইউএসএইড ও যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সহায়তাকারী সংস্থা ডিএফআইডি (বর্তমানে এফসিডিও)। ডিএফআইডির প্রতিশ্রুত অর্থায়ন ছিল ১০ মিলিয়ন ডলার।
‘এসপিএল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক সহিংসতা হ্রাস করে শান্তি ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তৈরি, দলগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার উন্নয়ন এবং প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্বের বিকাশে উৎসাহ প্রদানও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল,’ বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউএসএইডের প্রকল্প বাস্তবায়নে মার্কিন সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
‘এ নীতির অধীনে কঠোর আর্থিক নিরীক্ষা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজনে পুনর্নিরীক্ষা করা হয়।’
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে এসপিএল প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে।
'তাই এটি বাংলাদেশের দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন কোনো সংস্থাকে দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। বস্তুত, এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তির আওতায় বাস্তবায়িত হয়।'
এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের কোনো কিছু করার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশকে দেওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের ইউএসএইড তহবিল এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে গেছে, যার নাম কেউ কখনও শোনেনি। তারা ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। তারা একটি চেক পেয়েছে। কল্পনা করুন-আপনার একটা ছোট প্রতিষ্ঠান আছে, এখান থেকে ১০ হাজার ডলার, ওখান থেকে ১০ হাজার ডলার পান। আর তারপর দেখা গেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার। ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুজন লোক কাজ করত।’
ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসে গভর্নরদের কার্যনির্বাহী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ মন্তব্য করেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডোজ) এক্স-এ ১১টি দেশের নাম এবং বাতিল হওয়া মার্কিন অর্থায়নকৃত কিছু বিদেশি প্রকল্পের একটি তালিকা প্রকাশ করে।
ওই তালিকায় বাংলাদেশের ‘রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের জন্য ২৯ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দের কথাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।