এক সময় বরিশাল অঞ্চলের যাত্রী পরিবহন নির্ভর করতো একমাত্র নৌপথের উপর। সময় বদলেছে। এখন সড়ক পথ সক্রিয় হয়েছে। তারপরেও নৌপথে চলার আনন্দ এখন যাত্রীদের টানে। লঞ্চের কেবিন মানেই নতুন যাত্রার বিলাস-বহুল যাত্রার পদধ্বনি। যদিও নৌপথ এখন অনেকটাই দস্যুদের দখলে। আসন্ন ঈদে নিরাপদ নৌপথ চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের সামনে তাই নতুন চ্যালেঞ্জ।
শেষের পথে রমজান মাস। এরপরই ঈদুল ফিতর। আর ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা ছাড়বেন রাজধানীর পৌনে ২ কোটি মানুষ। এদের মধ্যে একটা অংশ দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ। বছর খানেক আগেও তারা বাড়ি ফিরতে বেছে নিতেন রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ টার্মিনাল। কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে সদরঘাটের চাহিদা অনেকটাই কমে যায়। বর্তমানে সেই স্থবির সময় কাটিয়ে উঠেছে রাজধানীর একমাত্র নৌবন্দর সদরঘাট। এরই মধ্যে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে এই সদরঘাটে।
দক্ষিণাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ঘরমুখী মানুষ সদরঘাট দিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ। ঈদে ঘরমুখো নৌ-যাত্রীদের যাত্রা নিরাপদ করতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ,বিআইডব্লিউটিসি, নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন নৌ সেক্টর সংস্থা। নাড়ির টানে ঘরমুখো যাত্রীরা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ঈদের আগে ৫দিন সদরঘাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিক সমিতির প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সদরঘাট থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত রাস্তা যানজটমুক্ত এবং সদরঘাট টার্মিনাল ও লঞ্চসমূহ হকারমুক্ত রাখতে হবে। এছাড়া ঈদের ফিরতি যাত্রিদের চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য সদরঘাট টার্মিনালের সামনের রাস্তা হতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে মধ্যরাতের পর থেকে মিনিবাস, লেগুনা, অটোরিক্সা ও টেম্পোসমূহ এলামোলোভাবে না রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের তার জন্য নির্ধারিত ষ্ট্যান্ডে পার্কিং নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে নৌপথে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ যে কোনো জরুরী প্রয়োজনে ও সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে ৯৯৯সহ বিআইডব্লিউটিএ’র হট লাইন নম্বর: ১৬১১৩ যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ৯৯৯সহ বিআইডব্লিউটিএ হট লাইন নম্বরটি সর্বসাধারনের অবহিত করার জন্য ব্যাপক প্রচার করতে বিআইডব্লিউটি এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতিও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা ও সেবায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। গত ১৮ মার্চ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ককে যানজটমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেন।
এছাড়া নৌপথে ঈদযাত্রার প্রস্তুতি দেখতে সদরঘাটসহ নৌরুটের বিভিন্ন স্পটে আকস্মিক পরিদর্শনে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। সভায় উপদেষ্টা নৌ-দুর্ঘটনা রোধকল্পে ঈদের আগের পাঁচদিন ও পরের পাঁচদিন সার্বক্ষণিক বাল্কহেড (বালুবাহী) চলাচল বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন।
লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামাল বাদল বলেন, ‘বর্তমানে একশ’টিরও বেশি লঞ্চ নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে চলাচল করছে । শুধু ঢাকা বরিশাল রুটে বর্তমানে ১৮টি লঞ্চ চলাচল করছে। এবারের ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় আমরা বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারব বলে আশাবাদী। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত আমরা নানা ব্যবস্থা নিয়েছি। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করার বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।’