কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহার, এক ও অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণসহ বিদ্যমান সংকট সমাধানে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনায় বসার আল্টিমেটাম দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রোববার (১৮ মে) সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম রাহাত হোসেন, ডিজিএম আলী হাসান মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, ডিজিএম আসাদুজ্জামান ভুঁইয়া, এজিএম মনির হোসেন প্রমুখ।
সম্মেলনে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের বিদ্যমান সংকট নিরসনপূর্বক যৌক্তিক সংস্কার চাওয়ায় জুলাই স্প্রিরিট ধারণকারী বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত চার মাসে প্রায় চার সহস্রাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতি, বদলি সংযুক্তিসহ হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তারা বলেন, নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে ভঙ্গুর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ করে গ্রাহক হয়রানি এবং গ্রাহক বনাম সমিতির কর্মরত কর্মচারীদের মুখোমুখি দাঁড়া করিয়ে দেওয়া, আরইবির ব্যর্থতার দায়ভার সমিতিগুলোর ওপর চাপানো, নানান আর্থিক অনিয়ম, কর্মক্ষেত্রে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করা কর্মীর দায় না নিয়ে বরং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও জুলুম ইত্যাদি কারণে দীর্ঘকালের অসন্তোষের প্রেক্ষিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে সমিতিগুলোতে সম্মিলিত আন্দোলনের সূত্রপাত।
তারা আরও বলেন, যৌক্তিক দাবিতে নিয়মানুযায়ী প্রথমে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, এরপর বিদ্যুৎ সচিব এবং পরবর্তীতে তৎকালীন মন্ত্রণালয় প্রধানকে লিখিতভাবে জানানো হয়। এরপর থেকেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের ওপর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দমন নিপীড়ন শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা গত ৫ মে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রাহকসেবা অক্ষুণ্ন রেখে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ, আরইবি এবং সমিতির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
কিন্তু ২০২৪ সালের ১০ মে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তদুপরি এ সময়ের মধ্যে আরইবি কর্তৃক ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন-২০১৩’ সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে গিয়ে গ্রাহক এবং সমিতিগুলোকে বিপাকে ফেলতে উক্ত আইনে আরইবি কিছু ধারা সংশোধন ও সংযোজন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে।
পরবর্তীতে গ্রাহক হয়রানি ও সভার সিদ্ধান্ত না মেনে আমাদের প্রতি প্রহসন, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং হয়রানির প্রতিবাদে গত বছরের ১ জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রাহক সেবা সচল রেখে পুনরায় কর্মবিরতি শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে ৫ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগে আরইবি, পবিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় পুনরায় ১০ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। তখন আমাদের বিএনপি ও জামায়াতের দোসর ও উন্নয়ন বিরোধী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পরেও বার বার আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অসহযোগিতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। বাধ্য হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর সারা দেশে পল্লী বিদ্যুতের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রাহক সেবা চালু রেখে ৬১ জেলার জেলা প্রশাসকের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন এবং মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়। স্মারকলিপির দাবি জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫ এর অ্যাজেন্ডা হিসেবে গৃহীত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূত করার দাবিটি যৌক্তিক হওয়ায় মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে বাস্তবায়নের নিমিত্তে বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, এরপর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আস্থা রেখে আমরা কোনো কর্মসূচি আর দেইনি। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরের মানববন্ধনে উদ্ঘাটন হওয়া ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে হঠাৎ করেই ১৬ এবং ১৭ অক্টোবর এই দুইদিনে সমিতির ১৭১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে রাষ্ট্র বিরোধী ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা ও ২৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। মামলায় মোট ১৬ জনকে আটক এবং রিমান্ডে নেওয়া হয়। ৬৩ জনকে ১৭ অক্টোবর পরবর্তী ১ সপ্তাহে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের মধ্যে বিদ্যমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এ সংকট সমাধানে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান তারা।