কোরবানির পশুর হাট

বেড়েছে ক্রেতার চাপ, হাটে নেই পর্যাপ্ত পশু 

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছুটি শুরু হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে। এদিন রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতার ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। বেড়েছে বেচাকেনাও। শেষ মুহূর্তে এসে হাট যেন আরও জমে উঠেছে। বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়, তবে সে তুলনায় হাটে কোরবানির পশু কম। এ অবস্থায় আজও নতুন করে হাটে আসছে কোরবানির পশু।

শুক্রবার (৬ জুন) হাট ইজারা-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাটে পর্যাপ্ত পশু নেই। তাছাড়া ক্রেতাদের চাপ বেড়েছে। তাই আজও নতুন করে হাটে আসছে কোরবানির পশু।

ইজারাদার ও ব্যাপারিরা জানিয়েছেন, তাদের হাটে বৃহস্পতিবারই গরু বিক্রি অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসে কাঙ্ক্ষিত পশু কিনতে পারছেন না অনেক ক্রেতাই। এক হাট থেকে অন্য হাটে দৌড়াচ্ছেন তারা।

ব্যাপারিরা বলছেন, নতুন করে পশু না এলে বিকেল নাগাদ খালি হাতে ফিরতে হবে ক্রেতাদের। এ বছর এক থেকে দুই লাখ টাকা দামের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বড় গরু তেমন কেউ ধরছে না। ক্রেতা আসে সেলফি তুলে, দাম জিজ্ঞাসা করে চলে যান। বড় গরুগুলো কম দামে ছাড়লে লোকসান গুনতে হবে। তাই শেষ সময় পর্যন্ত তারা দেখতে চান। 

অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, এখন আর দেখাদেখির সময় নেই। পছন্দ হলে বাজেটের আশেপাশের দামে কিনছেন তারা।

শুক্রবার (৬ জুন) রাজধানীর হাটগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, অনেক হাটেই দেখা দিয়েছে গরুর সংকট। ছোট-মাঝারি পশু রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো সকালেই খালি। ফলে ক্রেতারা কিনতে পারছেন না কাঙিক্ষত পশু। পশু যাও মিলছে, সেগুলোর দাম নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে দুই এক হাজার টাকা কম কিংবা বেশি-পছন্দসই পশু পেলেই কিনে নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। ক্রেতারা বলছের, এখন আর দেখাদেখির সময় নেই। পছন্দ হলে বাজেটের আশেপাশের দামে কিনছেন তারা।

শনিরআখড়া হাট আয়োজকদের এক সদস্য বলেন, আমাদের হাটে দূর-দূরান্ত থেকে পশু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। কুষ্টিয়া, নড়াইল, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গরু নিয়ে ব্যাপারীরা আসছেন। গত শনিবার বিকেলে হাটে গরু আসা শুরু হয়। এরপর রবি, সোম ও মঙ্গলবার টুকটাক বিক্রি হয়েছে। বুধবার বিকেল থেকে রাত এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সারাদিন প্রচুর বিক্রি হয়। রাতের মধ্যে মোটামুটি হাট খালি হয়ে গেছে। যেসব ব্যাপারী গরু বিক্রি করেছেন তারা রাতে এলাকায় গিয়ে আজ আবার গরু নিয়ে এসেছেন। আজও মোটামুটি পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু এসেছে, বিক্রিও ভালো।

তিনি বলেন, দুপুরে বৃষ্টি আর জুমার নামাজের কারণে ক্রেতা কিছুটা কম ছিল। বিকেল থেকে আবার ক্রেতা আসছেন, সামনে চাপ আরও বাড়বে।

ব্যবসায়ী সাগর ইসলাম গরু কিনতে এসেছেন শনিরআখড়া পশুর হাটে। তিনি বলেন, সকালে কমলাপুর পশুর হাটে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকটি গরু পছন্দও হয়েছিল। কিন্তু দাম বেশি মনে হলো। পরে শনিরআখড়া হাটে এসে দেখি হাটে পর্যাপ্ত পশু নেই। এখন আর দেখাদেখির সময় নাই। পছন্দ হলেই নিয়ে নেব।

কমলাপুর পশুর হাটে বগুড়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন জনৈক বিক্রেতা। তিনি বলেন, এবার ১৭টি গরু এনেছি। ইতোমধ্যে ৮টি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতারা দরদাম করছেন, সুবিধামতো দাম পাওয়া গেলে তখনই গরু ছাড়ছি। দাম কিছুটা বেশি, কারণ আমরা গ্রাম থেকে গরু ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। ট্রাক ভাড়া, পশু খাদ্য, নিজেদের খাওয়া-দাওয়া ও থাকাসহ সব মিলিয়ে আমাদের ব্যয় অনেক। তাই দাম একটু বাড়তি হলে সেটা অস্বাভাবিক নয়।

মেরুল বাড্ডা কাঁচা বাজার সংলগ্ন পশুর হাটের ইজারাদার মাহমুদুল হাসান জানান, হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি ছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু এসেছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে অনেকে আগে ভাগেই ভালো দাম পেয়ে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। নতুন করে হাটে গরু না এলে অনেকে খালি হাতে ফিরবেন।

রাজবাড়ী থেকে নতুন করে ৯টি গরু নিয়ে এসেছেন মাজেদ। মাজেদ বলেন, আগে ১৯টি গরু বিক্রি করে গিয়ে আজ আবার গরু নিয়ে আসলাম রাজবাড়ী থেকে। আশা করছি নয়টি গরু বিক্রি হয়ে যাবে। আগের অভিজ্ঞতায় বলি এখনো অনেকে গরু কেনেননি। তাই আজ তাদের গরু কিনতেই হবে।