বিবিসি আই’র অনুসন্ধান

নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীকে 'প্রাণঘাতী অস্ত্র' ব্যবহারের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি অডিও বিশ্লেষণ করে এমন সত্যতা খুঁজে পেয়েছে বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন। 

অডিও ক্লিপটি গত মার্চে অনলাইনে ফাঁস হয়। এতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, তিনি তার বাহিনীকে 'প্রাণঘাতী অস্ত্র' ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে বলেন, 'যেখানেই পাবে, গুলি করবে।

এখন এই অডিও ক্লিপটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে 'মূল প্রমাণ' হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপক্ষ। শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করায় তার অনুপস্থিতিতেই মামলাটি চলছে। 

 

জাতিসংঘের তদন্তকারীদের মতে, গত বছরের গ্রীষ্মে দেশজুড়ে বিক্ষোভ দমন অভিযানে প্রায় ১,৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

আওয়ামী লীগ দলের একজন মুখপাত্র অডিওটি সম্পর্কে বলেন, এতে 'অবৈধ উদ্দেশ্য' বা 'অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার' কোনো প্রমাণ নেই। তবে বিবিসি বলছে, একজন অজ্ঞাতনামা জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণযা সরাসরি বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

গত গ্রীষ্মেই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। এই বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সংরক্ষিত কোটা সংস্কারের দাবিতে। পরে তা ব্যাপক আন্দোলনে রূপ নেয় এবং দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে পতনের মুখে ফেলে। এটি ছিল ১৯৭১ সালের পর দেশের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সহিংসতা।

বিবিসির কাছে ফাঁস হওয়া অডিও সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানায়, ১৮ জুলাই যখন ফোনকলটি হয়েছিল, তখন শেখ হাসিনা ঢাকার গণভবনে অবস্থান করছিলেন। ফোনালাপটি রেকর্ড করেছিল বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)।