রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নয়, বরং ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
বুধবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সোহাগ বিগত সরকারের সময় সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ভাগ্নে পিল্লু কমিশনারের ছত্রছায়ায় বিদ্যুতের চোরাই তার কেনাবেচা করতো। ৫ আগস্টের পর তার এই ব্যবসায় ভাগ বসাতে চায় তারই পরিচিতজনরা। এ নিয়েই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি; যা থেকে মব সৃষ্টি করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত ৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে প্রকাশ্য লাল চাঁন ওরফে সোহাগকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর ৯৯৯-এ কল পেয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঙ্গে সঙ্গে ফাঁড়িতে খবর দেন। ইনচার্জ এসআই সরোয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং সন্দেহভাজন মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করেন। পরে সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, ভিডিও ফুটেজে পাথর নিক্ষেপকারীকে শনাক্ত করা গেলেও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। তবে পুলিশের বিশেষ টিমের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ১৫ জুলাই পটুয়াখালী থেকে মো. রেজওয়ান উদ্দিন অভি নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাবার নাম মনোরঞ্জন বস, মায়ের নাম বিউটি দেব মিলা। তিনি একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
এজাহার নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে নিহতের সাবেক স্ত্রী থানায় গিয়ে মামলা করতে চেয়েছিলেন। পরে তার সৎ ভাই রনি ও বড় বোন মঞ্জু আরা বেগম থানায় যান। তারা ২৩ জনকে আসামি করে একটি খসড়া এজাহার প্রস্তুত করেন। পরে মূল বাদি মঞ্জু আরা পাঁচ জনের নাম বাদ দিয়ে এবং একজনের নাম যোগ করে মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত এজাহার দায়ের করেন। খসড়া এজাহারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা বিভ্রান্তির জন্ম দেয়।
ডিএমপি কমিশনার জানান, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ, লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এবং মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।