কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত আন্তর্জাতিক অংশীজন সংলাপের শেষ দিনে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বিদেশি কূটনীতিক, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে তাঁরা রোহিঙ্গাদের জীবনযাপন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য মানবিক কার্যক্রম সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং ইউএনএইচসিআরের স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। পরিদর্শনের সময় রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তারা বাস্তব পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা সম্পর্কে অবগত হন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে বলেন, আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বাস্তবচিত্র দেখানো হয়েছে যাতে রোহিঙ্গাদের প্রকৃত দুর্দশা বুঝে তারা টেকসই সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বন্ধ হলে ক্যাম্পগুলোতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
ডব্লিউএফপির প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার শেখ রবিউল আলম জানান, বর্তমান অর্থায়ন দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হলেও পরবর্তী সময়ের জন্য নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি এখনও পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সংলাপে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি সহ অন্তত ১০টি দলের প্রতিনিধিরা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়, কোনো একক সরকারের নয়। সকল দলের সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও জোরালো করবে বলে তারা মত দেন।
বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অসামান্য ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং সংকটকে একটি বৈশ্বিক মানবিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।
এই সংলাপ থেকে পাওয়া সুপারিশ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, সেখানে থেকে সংকট নিরসনে কার্যকর কূটনৈতিক অগ্রগতি হবে।
রোববার শুরু হওয়া এই সংলাপের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক মানবিক কূটনীতির প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। ক্যাম্প পরিদর্শনের মাধ্যমে তিন দিনের ‘স্টেকহোল্ডার্স ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়েজ টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।