ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’ নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দিয়ে, ভোটগ্রহণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সতর্ক ও পেশাদার মনোভাব নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। একই সঙ্গে ‘বিতর্কিত ভোটের’ জন্য সাবেক দুই সিইসিকে কারাবন্দি ও জুতার মালা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগের বিষয়টিও তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনাররা।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) ‘ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে কোর প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব আখতার আহমেদ, ইটিআই মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আইন, বিধি জানার পাশাপাশি নৈতিকতা, সততা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণের যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অপতথ্য, এআই অপব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কী পরিস্থিতি আসবে জানি না। তবে আমরা চাই ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন উপহার দিতে। এর জন্য প্রশিক্ষণের মান ও বাস্তবায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আমার সহকর্মী বললেন নির্বাচনটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কিন্তু এর চেয়েও বড় বাস্তবতা সাবেক এক সিইসিকে জুতার মালা পরানো হয়েছে, আরেকজন আছেন কারাগারে। এই অবস্থার দায় কার, তা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছি, আমাদের প্রশ্ন হওয়া উচিত আমরা কী করবো? আমাদের ভূমিকা কী হবে? সমান সুযোগ তৈরিতে আইন মেনেই কাজ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, এটা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তবে আমাদের দায়িত্ব হলো সুন্দর, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, এই দেশে গণঅভ্যুত্থানের ফসল আমরা। এত প্রাণ গেছে, রক্ত গেছে সবই সঠিক নির্বাচনের অভাবে। যদি এবারও ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদেরও অংশীদারিত্ব থাকবে। আজকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গলায় যদি জুতার মালা দেওয়া হয় এটির অংশীদার কিন্তু আপনিও, মনে করবেন না যে আপনি না।
কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ফাঁকি দেওয়া যাবে না। নির্বাচন নিয়ে ধানাই-পানাই চলবে না। জীবন চলে যেতে পারে, কিন্তু নির্বাচনে দায়িত্বহীনতা চলবে না। প্রতিটি ভোটার, প্রতিটি কেন্দ্র যেন নির্বাচনকে বিশ্বাস করতে পারে সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।
কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ নানা আইনি দিক ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত।
ইটিআই মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, আগামী চার মাসে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ হবে নিরপেক্ষ ও পেশাদার নির্বাচন নিশ্চিত করার ভিত্তি।