বদিউল আলম

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার

কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।

শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ভবিষ্যতে যারা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করছেন এবং জনগণের ভোট পেতে চান তাদের উচিত কন্যা শিশুর প্রতি সংবেদনশীল এবং যত্নশীল হওয়া। কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা এখনো বন্ধ হয়নি এবং তাদের প্রতি নিপীড়ন কমানো সম্ভব হয়নি। কন্যাশিশুকে তাদের মানসিক আঘাতের কারণে আত্মহত্যা করার প্রবণতায় ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। কন্যাশিশুকে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে যদি রাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়ায়।’

তিনি বলেন, ‘নারীর ন্যায্য রাজনৈতিক অধিকারের আলোচনায় পুরুষরা বা অন্য কেউ জয়ী হয়নি, বরং জয়ী হয়েছে পুরুষতন্ত্র এবং আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। এই মানসিকতার কারণেই নারীদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইচ্ছাকৃতভাবে নারী কমিশনের রিপোর্ট বাদ দেওয়া হয়নি, যদিও এটি তাদের ম্যান্ডেট ছিল। তবে সরকারের কাছে এমন অনেক ক্ষমতা আছে, যেসব সুপারিশে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না বা রাজনৈতিক দ্বিমত থাকবে না, সেগুলো বাস্তবায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশতঃ পুরুষতন্ত্র আমাদের সমাজে এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে এর ফলে নারীদের প্রতি আমরা বৈষম্য করেছি। তাদের বঞ্চিত করেছি, অধস্তন করে রেখেছি, নির্যাতন করেছি এবং নিপীড়িত রেখেছি।  বহুলাংশে এটি জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার বলে অনেকেই বিশ্বাস করলেও রাজনৈতিক ঐক্যমতে পৌঁছানো যায়নি।’ 

সংবাদ সম্মেলনে ৮ মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট,২৫) কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২০২৫ সালের প্রথম ৮ মাসে ৫৪ জন কন্যা শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হলেও ২০২৩ সালের তুলনায় কম। এই সময়ে ৩৯০ জন কন্যা শিশু ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ৪৩ জন গণধর্ষণ এবং ২৯ জন প্রতিবন্ধী কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর ১৫ জন কন্যাশিশু খুন হয়েছে ও ৫ জন আত্মহত্যা করেছে। ওই সময়ের মধ্যে ৩৪ জন কন্যাশিশু অপহরণ পাচারের শিকার হয়েছে। 

এ সময়ের মধ্যে ১০৪ জন কন্যাশিশু আত্মহনন ও ৮৩ জন কন্যাশিশু খুন হয়েছে। ৫০ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ২০৫ জন কন্যা শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। ১৯ জন কন্যাশিশু পারিবারিক সহিংসতার স্বীকার ও সাত জন শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।

অপরাজেয় বাংলাদেশ'র নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, জুলাই কন্যা সুরাইয়া আক্তার আনতা, এডুকো বাংলাদেশ এর পরিচালক আব্দুর রহিম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর পরিচালক নিশাত সুলতানা, অ্যাডভোকেট ফাহমিদা রিংকী প্রমুখ।