বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা এবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা। একই সঙ্গে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। আর গতকাল সোমবার থেকে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন, তা অব্যহত থাকবে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতের মধ্যে যদি প্রজ্ঞাপন বা কোনো ঘোষণা না দেওয়া হয়, তাহলে লং মার্চ ও চলমান কর্মবিরতি চলবে।’
এর আগে শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসেন জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের একটি দাবি হলো বাড়িভাড়া বৃদ্ধি।
তাঁরা এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া পান। এক হাজার টাকায় কোথাও বাড়িভাড়া পাওয়া যায়? এটা হাস্যকর শোনায়। শিক্ষকরা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো খুবই নগণ্য। তাঁদের আরো বেশি দাবি করা দরকার ছিল। সামনে যাঁরা নির্বাচিত হবেন তাঁরা আপনাদের দাবিদাওয়ায় আরো গুরুত্ব দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের কাজ কলম দিয়ে লেখাপড়া করা। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যস্ত থাকা। তবে দাবি মেনে না নেওয়ায় শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে রাস্তাঘাটে নেমেছেন। এই অবস্থার শেষ হওয়া দরকার।
তবে শিক্ষকদের দাবি না মানা হলে তাঁরা ঘরে ফিরবেন না। অবিলম্বে প্রধান উপদেষ্টার উচিত শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে তাঁদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার ব্যবস্থা করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘ রোববার (১২ অক্টোবর) শিক্ষকদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ, লাঠিপেটা করা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশকে দিয়ে লাঠিপেটা করা ঠিক হয়নি। শিক্ষকরা সম্মানিত ব্যক্তি। সেই ব্যক্তিদের পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটার ঘটনা যেন আর না ঘটে।’
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, যারা জাতির বিবেক শিক্ষকদের ওপর হামলা করে তারা কখনো মানুষ হতে পারে না। হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যাঁরা শিক্ষকদের ওপর হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদেরও মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
জানা যায়, দেশের ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। তাঁরা সরকারি বেতন স্কেলে মূল বেতনের পাশাপাশি মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের অর্ধেক। শতাংশ হিসাবে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা এক হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে তাঁরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাড়িভাড়া এক হাজার থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করে আদেশ জারি করে অর্থ বিভাগ। তবে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত রবিবার শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করলে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। এ সময় জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেনেডও মারা হয়। এর পর থেকে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন।
এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের পক্ষ থেকে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতিরও ডাক দেওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ স্কুলেই গতকাল ক্লাস হয়েছে বলে জানা গেছে। আর কিছু স্কুলের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন।