ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। ইতিহাসের সকল আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সকল ক্ষেত্রে বারুদ হিসাবে কাজ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জুলাই আন্দোলনের পর দেশের রাজনীতি আরও বেশি আবর্তিত হচ্ছে জেনারেশন জেডকে ঘিরে। দেশের জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণ এই ছাত্ররা যা আমাদের দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে রাজনীতির নতুন কেমিস্ট্রি বা কৌশল।
তাহলে এটা বলাই যায়, রাজনীতিতে পুরোনো কৌশল দিয়ে এই নতুন জেনারেশনকে কোনো ভাবেই বুঝানো যাবে না। সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুনদের আকাঙ্ক্ষা বুঝে রাজনীতির কৌশলে নতুনত্ব আনা জরুরী হয়ে পড়েছে। হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো বিখ্যাত মোবাইল কোম্পানি নকিয়ার কথা। তারা অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমকে সঠিক সময়ে গ্রহণ করতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছিল। ঠিক তেমনি নতুন প্রজন্মকে বুঝতে না পারলে যে কোন রাজনৈতিক দলের বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়েছে। এতোদিন পরে এসেও স্বাধীনতার ইস্যু নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে বিভক্তি করে ফেলা ব্যাপারটি নতুন প্রজন্মের কাছে খুব বেশি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে বলে মনে হয় না। তারই প্রমাণ ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল। তাদের কাছে এগিয়ে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু ছাত্র নয়, দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তারা সকল দলের কর্মকান্ডের উপর প্রতিনিয়ত নজর রাখছে। তাই জাতীয় নির্বাচনের ভোটের মাঠে অন্ধভাবে কাউকে ভোট দেবে এটা মনে করলে ভুল করা হবে।
অনেক রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা ডাকসু নির্বাচনের পর বলার চেষ্টা করছে যে, ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল দিয়ে জাতীয় নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা যাবে না। বিষয়টি আংশিকভাবে ঠিক হলেও সামগ্রিকভাবে এর প্রভাবকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ব্যাপারটি একটু বুঝিয়ে বলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আসে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। তাদের চিন্তা চেতনায় তার নিজস্ব এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড যা তারা দেখেছে সেটাই তার মনে জায়গা করে নিয়েছে। আর তার নিজের মতামত এই ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এই শিক্ষিত জেনারেশন জেড এর মতাদর্শ তাদের পরিবারের কাছে জুলাই বিপ্লবের পর যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে। তাই সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় এনে নিজেদের সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে তারা রাজনীতিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
যে কোনো দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ নতুন প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার পরিপূরক না হলে এই প্রজন্ম তা গ্রহণ করবে না। এটাই এই প্রজন্মের নতুন রাজনৈতিক বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
লেখক : লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) মহসিন আলী খান, পিএসসি, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক