স্বজনতোষী পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ॥ রায়হান আহমেদ তপাদার

গত বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার ২৩ দিনের দেশ কাঁপানো আন্দোলনে পতন হলো আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের বিপুল সায় নিয়ে তিনি ক্ষমতায় বসেছিলেন। এরপর নিজের শাসনামলে আর কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন তিনি হতে দেননি। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থপাচার, দেশকে স্বজনতোষী পুঁজিবাদের কবলে ফেলা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা, ঋণের নামে ব্যাংক লুটের সুযোগ দেওয়া, আয়বৈষম্য চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াসহ বিস্তৃত অভিযোগ রয়েছে। এসবের বিপরীতে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে। কিন্তু শেষ সময়ে অর্থনীতিও সরকার সংকটে ফেলেছিল। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) কমে গেছে, খেলাপি ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, দ্রব্যমূল্য সীমিত আয়ের মানুষের নাগাল ছাড়া হয়ে গেছে।

দেশের মানুষের এসব সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রীদের মুখে উপহাস শোনা যেতো। কেউ কেউ বলতেন, দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সমাজের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েই ছিল। সেটার বহিঃপ্রকাশ ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। উপলক্ষ তৈরি করে দেয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গত বছরের ৬ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের সূচনা হয়।

বিক্ষোভ হয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোটা বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৭ জুলাই সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভে অচল হয় রাজধানী। পরের দিনও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৯ জুলাই সারাদেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। কোটা বহাল রেখে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আইনজীবীর মাধ্যমে পক্ষভুক্ত হন দুই শিক্ষার্থী। ১০ জুলাই কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের আদেশের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ১৪ জুলাই কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রাজাকার’ শব্দ বলার জের ধরে রাতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার-সমর্থকরা। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে পুলিশসহ ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হন অন্তত তিন শতাধিক।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকে প্রতিরোধে ছাত্রলীগ প্রস্তুত। ১৬ জুলাই আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করে সরকার। এর মধ্যে সড়ক অবরোধ, সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা এবং রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনার ভিডিও প্রকাশ পায়। এর জেরে বেড়ে যায় আন্দোলনের তীব্রতা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক-দফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি দেয় আন্দোলনকারীরা।

কিন্তু সহিংসতার তীব্রতা ও ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। মেরুল বাড্ডায় পুলিশ অবরুদ্ধ হয়, পরে হেলিকপ্টারে উদ্ধার। বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ২১ জনের।

এ অবস্থায় ৫৬ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব দেয় আওয়ামী লীগ। ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটে এদিন, মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। রাজধানীতে প্রাণ হারান ৪৯ জন। এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি বলে জানান আইনমন্ত্রী। আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন।

রাত ৯টা থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে সরকার। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০ জুলাই অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করে সরকার। সারাদেশে মোতায়েন করা হয় ২৭ হাজার সেনা। আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার অভিযোগে সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে শত শত মামলা করা হয়। মামলায় হাজার হাজার মানুষকে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের অভিযোগ ওঠে সরকারের বিরুদ্ধে।

একইসঙ্গে দাবি ওঠে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহতদের মৃত্যুর বিচার অবিলম্বে করতে হবে। এরপর শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। ২১ জুলাই কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি, কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল, মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটা ১ শতাংশ নির্ধারণের আদেশ দেওয়া হয়।

তবে সরকার চাইলে বদলানোর সুযোগ রাখা হয়। কারফিউ অব্যাহত থাকে। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

২২ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময়ের মধ্যে তারা চার-দফা দাবির বাস্তবায়ন দেখার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় চার দিনে অন্তত ১৩১ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের খবর আসে। ২৩ জুলাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরে। পরদিন রাতে সারাদেশে বাসাবাড়িতেও ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়।

২৪ জুলাই নির্বাহী আদেশে তিন দিন সাধারণ ছুটির পর অফিস খোলে। কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানোয় বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম চলে। ২৬ জুলাই আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যান শেখ হাসিনা।

বক্তব্যকে বিকৃত করার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের রাজাকার বলে পরিচয় দিলো, আমি তাদের রাজাকার বলিনি।’ ২৭ জুলাই আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা। ২৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ নিহতদের একটি অংশের পরিবারের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা।

আহতদের দেখতে রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে যান তিনি। আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ১৪৭ মৃত্যুর তথ্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। যদিও গণমাধ্যমের হিসাবে সংখ্যাটি দুই শতাধিক। ১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট ফেরে এদিন। ২৯ জুলাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে ঐকমত্য হয় ১৪-দলীয় জোটের বৈঠকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ৩০ জুলাই কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সারাদেশে শোক পালন করা হয়। সেই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুক প্রোফাইল লাল এবং চোখে কালো কাপড় বেঁধে ছবি পোস্ট করার আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন।

৩১ জুলাই আন্দোলনে হত্যার বিচার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত হয়। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা ঘিরে ধস্তাধস্তি হয়। সুষ্ঠু তদন্তে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর আগ্রহ দেখায় জাতিসংঘও।

১ আগস্ট ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। নিহতদের স্মরণে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করা হয়। ২ আগস্ট গণমিছিলে হামলা সংঘর্ষ, পুলিশসহ দুজন নিহতের খবর পাওয়া যায়।

৩ আগস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা। সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীরা। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বিশাল জমায়েত থেকে আবারও সরকার পতনের এক-দফা দাবি আসে। ঢাকার পরিবেশ অনেকটা শান্তিপূর্ণ থাকলেও অন্তত ১১ জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্তত একজনের প্রাণহানি হয়। ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সারাদেশে ব্যাপক সংঘাতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১৯ নেতাকর্মী ছিলেন। শাহবাগে ব্যাপক জমায়েতের মধ্যে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন।

৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের আহ্বানে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকামুখী হন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা। এর আগে ছাত্ররা সহিংস কোনো কর্মসূচি ছাড়াই তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের দাবি ছিল, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ছাত্ররা। পরে তা একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট এই কর্মসূচির ডাক দেয় তারা। ছাত্র-জনতা রাজধানীর শাহবাগ ও উত্তরা দুদিক দিয়ে গণভবনমুখী আসতে শুরু করে। দুদিক দিয়ে হেঁটে মাত্র ৪৫ মিনিটের দূরত্বে ছিল ছাত্র-জনতা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতা ৫ আগস্ট গণভবন ঘেরাও করতে আসার খবরে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সকাল সাড়ে ৯টায় গণভবনে বৈঠক করেন।

শেখ হাসিনাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা নাছোড়বান্দা। তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। এ নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে চলে বাহাস। তার পরিবারের লোকজনকে বোঝানো হয় পরিস্থিতি। কিন্তু তাতেও শেখ হাসিনা রাজি হচ্ছিলেন না। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় তিন বাহিনীর প্রধান শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার জন্য ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেন। এরপরই দুপুরের দিকে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু দেশ ছাড়ার আগে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। অবশ্য সেই সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ওইদিন দুপুরে দেশ ছাড়েন। প্রথমে তিনি যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছিলেন।

কিন্তু যুক্তরাজ্য রাজি না হওয়ায় দেশ ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাকে উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশে উড়োজাহাজ পাঠানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের আকাশসীমায় উড়োজাহাজ পাঠালে তাতে আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এরপর সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা সাড়ে ১৫ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী থাকার পর পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এর ভিত্তিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় ৮ আগস্ট।

লেখক:

গবেষক ও কলামিস্ট, যুক্তরাজ্য