অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানকে দীর্ঘায়িত করা যৌক্তিক হবে না: মঈন খান

‘নির্বাচন করার জন্য সরকার যৌক্তিক সময় নেবে’ দলের এমন বক্তব্যকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারে নিজেদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করতে চাইলে তা কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না। খবর বাসস’র।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মোমেনবাগে ডেমোক্রেসি অডিটোরিয়ামে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস, ছাত্র-জনতা এখন কোথায়?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে দি মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটি।

তিনি বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি করে আসছে। এমনকি বিদেশি কূটনৈতিকরাও এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী।

মঈন খান বলেন, গণতন্ত্রের জন্য দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে। সর্বশেষ ২৪’র আন্দোলনে যে নতুন সূর্য্য উদয় হয়েছে, সেই সূর্য্য কোনো দিন আমরা অস্তমিত হতে দিতে পারি না। এ জন্য প্রয়োজনে আমাদের নতুন করে সংগ্রাম করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায়ের পরে আমরা অপার মুক্তির আনন্দ উপভোগ করেছিলাম। কিন্তু ছয় মাস পরে এসে এখন সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারছি না। কারণ, দিনকে দিন দেশ এক অনিশ্চিত পথে যাত্রা করছে।’

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুরের বাড়ি ভাঙার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যে ঘটনা ঘটল, এ বিষয়ে আমার কাছে একজন রাষ্ট্রদূত জানতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে বলেছি, এর বীজ বপন হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ভেঙে দেওয়া।  তবে প্রতিহিংসার রাজনীতি ভালো কিছু বয়ে আনে না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকারের হাতে সংস্কার এবং নির্বাচন। এই দায়িত্ব থেকে ব্যর্থ হলে আমাদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে- এমনটা নয়। আমরা নতুন কিছুর জন্য চেষ্টা করব। এই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে এমনটা বলা হচ্ছে- রাজনৈতিক দলগুলো কিছু করেনি এমন একটা নেরেটিভ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। করতেই পারে। রাজনৈতিক দল করলে তাদের একটা উদ্দেশ্য থাকে। নতুন পার্টি যে কেউ করতে পারে। স্বাগত জানাই। ক্ষমতার ছায়াতলে থেকে পার্টি করলে দেশের মানুষ ভালোভাবে নেবে না।’

বিএনপি নেত্রী এবং সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, ‘হাসিনা চলে যাওয়ার পর মনে হলো এখন বুঝি সুখ আর সুখ। হাসিনা একাই চলে গেলে তার সমস্ত চরিত্র বহমান। এতদিন যারা আন্দোলনে ছিলেন তাদের এখন শুনতে হয়, চাঁদাবাজ।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয়। জিয়াউর রহমানের তখন বেঁচে থাকার কথা না।’

বৈঠকে অংশ নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সরকারের ছয় মাস টিকে থাকাটাই বড় সাফল্য। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন, বিনিয়োগ বাড়বে এটাও আশাব্যঞ্জক হয়নি। যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্ত অধিকাংশ ডেভিল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বড় ডেভিলদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন ছিঁচকে ডেভিলদের খুঁজছে।’

অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে গণফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিন। জাতিকে মুক্ত করুন।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো হাসিনার পতন চায়নি- এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করবে। ভালো কথা। কিন্তু এটা যেন কিং পার্টি না হয়ে যায়। তাহলে রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে। এই অভ্যুত্থানে সবার অংশগ্রহণ আছে। এখানে কাউকে বড় কাউকে ছোট করা যাবে না।’

অন্তবর্তী সরকারের সমালোচনা করে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘যারা দায়িত্বে আছে তারা নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন। আমাদের এখন একমাত্র তৃপ্তি হাসিনাকে আর দেখতে হচ্ছে না।’

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার ও সাংবাদিক আকবর হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমাদের সমাজে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গত তিন/চার মাস ধরে দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা দ্রুত তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্দোলনে সবারই অংশগ্রহণ ছিল। ফ্যাসিস্ট এবং ফ্যাসিস্টের দোসর ফিরে আসুক এটা কেউ চায় না। এমন কিছু জায়গায় সবাই একমত। সুতরাং ডেমোক্রেসি,  লিবারেল, উদারপন্থী, সহনশীল সমাজ লাগবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

বৈঠক সঞ্চালনা করেন- দি মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিজ বোর্ডের চেয়ারপাসন অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকার। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন- দি মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অভিনয় চন্দ্র সাহা।

বৈঠক আরও বক্তব্য দেন- প্রাণ আরএফএলের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, সাংবাদিক মঞ্জরুল আলম পান্না, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এম রাজীবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু প্রমুখ।