খালেদা জিয়ার জন্মদিন

এবারও নেই কেক কাটার আয়োজন

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট)। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা তৈয়বা মজুমদারের তৃতীয় সন্তান খালেদা জিয়ার জন্মদিনে দলীয়ভাবে এবারও কেক কাটার কোনো আয়োজন থাকছে না।

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, এবারের জন্মদিনে ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির কার্যালয় ও বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এতে মুক্তিযুদ্ধে, ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনে এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে সকাল ১১টায় এই দোয়া মাহফিল হবে।

মুক্তির পর দ্বিতীয় জন্মদিন
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন স্থায়ী মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর এটিই তার দ্বিতীয় জন্মদিন, যা তিনি মুক্ত পরিবেশে পালন করছেন। তবে বিএনপি বলছে, জুলাই-আগস্টের শহীদ ও আহতদের স্মরণে কেক কাটাসহ অন্য কোনো আড়ম্বরপূর্ণ কর্মসূচি থাকবে না।

দলটি ২০১৬ সাল থেকে জন্মদিনে কেক কাটার পরিবর্তে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে আসছে। এর আগে দীর্ঘ সময় তারা ১৫ আগস্ট কেক কেটে জন্মদিন পালন করতেন।

দীর্ঘদিনের অসুস্থতা
লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। তিনি গুলশানের ফিরোজা বাসায় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য চার মাস লন্ডনে থেকে এই বছরের ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি। নভেম্বরের ২১ তারিখ সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁকে সর্বশেষ প্রকাশ্যে দেখা যায়।

রাজনীতিতে প্রবেশ ও নেতৃত্ব
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে স্বামী ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপির রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন হন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন।

তিনি তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী, দু’বার বিরোধীদলীয় নেতা এবং সার্কের প্রথম নারী চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচনী ইতিহাসে পাঁচটি আসনে লড়ে বারবার জয়ের নজির গড়েছেন।

দমন–পীড়ন ও কারাজীবন
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার হন খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির মামলায় আবারও কারাগারে যান। ২০২০ সালের মার্চে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাননি।

ব্যক্তিজীবন
ফেনীর ফুলগাজীতে পৈত্রিক নিবাস হলেও শৈশব কেটেছে দিনাজপুরে। ১৯৬০ সালে সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান—তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো। কোকো ২০১৫ সালে মারা যান।

নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম জাগো নিউজকে বলেন, ২০২৪ সালের জন্মদিন ‘ভিন্ন এক ইতিহাস’।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির বলেন, গণতন্ত্রের জন্য তার ত্যাগ তাকে জাতির অভিভাবকের আসনে বসিয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, স্বৈরাচার মুক্ত পরিবেশে এইবার ম্যাডামের জন্মদিন পালিত হবে। আমরা তার জন্য দোয়া করব, তিনি যেন আবার দেশের নেতৃত্ব দিতে পারেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু  বলেন, গত দেড় দশক বদ্ধ পরিবেশে গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন হয়েছে। স্বৈরাচারীর পতন হলেও এখনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসেনি। বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তবে তিনি এই দিনটাকে খুব বড় করে উপস্থাপন করেননি; দোয়া এবং খুব সীমিত আকারে পালন করে থাকেন।