শেখ মুজিব জাতির পিতা নন, স্বাধীনতা অর্জনে অবদান আছে: নাহিদ ইসলাম

আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির কেন্দ্রে মুজিব পূজা ও মুক্তিযুদ্ধ পূজা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা নন। স্বাধীনতা অর্জনে তার ভূমিকা ও ত্যাগকে স্বীকার করি। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

নাহিদ বলেন, আমরা শেখ মুজিবের শাসনামলে ঘটে যাওয়া জাতীয় ট্র্যাজেডিকেও ভুলে যেতে পারি না। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশকে ভারতের এক ধরনের করদ রাজ্যে পরিণত করা হয়। ১৯৭২ সালের গণবিরোধী সংবিধান চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং লুণ্ঠন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও একদলীয় বাকশাল শাসনের ভিত্তি গড়ে তোলা হয়।

তিনি আরও বলেন, মুজিবপূজা-মুক্তিযুদ্ধপূজা হলো এক ধরনের রাজনৈতিক মূর্তিপূজা। যা ব্যবহার করা হয়েছে জনগণকে দমন করতে, দেশকে লুটপাট করতে এবং নাগরিকদের প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভাগ করতে। এটি ছিল একবিংশ শতাব্দীর জমিদারত্ব, যা গণতন্ত্রের মুখোশ পরে এসেছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ ছিল সমগ্র জনগণের সংগ্রাম।

এনসিপি আহ্বায়ক লিখেছেন, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে শাসন করেছে-দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে, মুজিবের নামে সব দুর্নীতি ও দমন-পীড়নকে বৈধতা দিয়ে।

তিনি লিখেছেন, ২০২৪ সালের জনগণের অভ্যুত্থান এ জমিদার তন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। আর কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা মতবাদ জনগণের অধিকার হরণ করতে পারবে না কিংবা বাংলাদেশের ওপর ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দিতে পারবে না। ‘জাতির পিতা’ নামক উপাধি ইতিহাস নয়, এটি একটি ফ্যাসিস্ট হাতিয়ার। যা আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করতে এবং রাষ্ট্রের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে। বাংলাদেশ কারো একার সম্পত্তি নয়। এর জন্ম বা ভবিষ্যতের মালিকানা কেউ দাবি করতে পারে না।

মুজিববাদ হলো শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের নামে তৈরি একটি ফ্যাসিস্ট আদর্শ। আমাদের সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, এ ফ্যাসিস্ট আদর্শের বিরুদ্ধে।

তিনি আরও লেখেন, মুজিববাদ একটি বিভাজনের ও ফ্যাসিবাদের আদর্শ। এটি গুম, খুন, ধর্ষণ ও সংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অর্থ বহন করে। এটি জাতীয় সম্পদের লুটপাট ও বিদেশে পাচার করে দেওয়ার আদর্শ। এটি ইসলামবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা এবং সংখ্যালঘুদের জমি দখলের নীতি। এটি জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়া। ষোল বছর ধরে মুজিবকে রাজনৈতিকভাবে জীবিত রাখা হয়েছিল একটি অস্ত্র হিসেবে, যার মূর্তির পেছনে চলে গিয়েছে অপহরণ, হত্যা, লুণ্ঠন ও গণহত্যা।

এনসিপির আহ্বায়ক লেখেন, মুজিববাদ একটি জীবন্ত বিপদ। এটিকে পরাজিত করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। আমাদের সংগ্রাম একটি প্রজাতন্ত্র নির্মাণের জন্য- একটি সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ; যেখানে কোনো দল, কোনো পরিবার বা কোনো নেতা জনগণের ঊর্ধ্বে নয়।

সবশেষ তিনি লেখেন, বাংলাদেশ কারো সম্পত্তি নয়- এটি জনগণের প্রজাতন্ত্র।