আকস্মিকভাবে মারা গেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রদল নেতা হাসিব। শোকাবহ এই মুহূর্তে জানাজায় সহমর্মিতা জানাতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, যা ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েও মানবিক মূল্যবোধের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শুক্রবার রাত পৌনে ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের সামনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, জবি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হাসিবের প্রথম জানাজায় শিক্ষক, সহপাঠী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। হাসিব ছিলেন ছাত্রদলের একজন সক্রিয় সদস্য।
জানাজায় ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামসহ জবির সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
জানাজার আগে কেন্দ্রীয় নেতারা এবং ক্যাম্পাসের কর্মীরা হাসিবুরের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, হাসিব অনেক ভালো ছেলে ছিলেন। প্রথম বর্ষ থেকেই ওর সঙ্গে পরিচয়। আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জুলাইয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও মিরপুরে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
শোক জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, হাসিব আমাদের ছাত্রদল পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য। জুলাই অভ্যুত্থান ও মিরপুরের আন্দোলনে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, হাসিবের সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি জুলাই যোদ্ধা। আমরা তার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আদর্শ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু একজন মুসলমানের মৃত্যুতে সমবেদনা জানানো সবার দায়িত্ব। হাসিবের মৃত্যুতে সর্বস্তরের মানুষের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে, তিনি একজন ভালো ও মিশুক মানুষ ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক জানান, জানাজা শেষে মরদেহ ভোলার চরফ্যাশনের গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি মাইক্রোবাস ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে হাসিবুরের সহপাঠীরাও যেতে পারবেন। খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস প্রত্যেক ছাত্রসংগঠনের বলয়ে একটি ফুলের বাগানে পরিণত হয়েছে। তার মধ্যে একটি ফুল ঝরে গেল। এ শোক সইবার নয়।
এর আগে, রাতের খাবারের জন্য শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল ও সদস্য সচিব শামসুল আরেফীনের সঙ্গে ক্যাম্পাসসংলগ্ন হোটেল স্টার কাবাবে অবস্থান করছিলেন হাসিবুর। এ সময় হঠাৎ তার খিঁচুনি ওঠে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘আমরা একসাথে বসেছিলাম। হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব করে হাসিবুর। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
মৃত হাসিবুর জবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। গোসল শেষে রাত ১২টায় জবি ক্যাম্পাসে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।