বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপিই সংস্কারের জন্মদাতা, আর এই সংস্কারের মধ্য দিয়েই দলের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, একটি দল ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি সংস্কার মানে না বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা সত্য নয়। আমাদের নেতা তারেক রহমান যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন, তার মধ্যেই সব ধরনের সংস্কারের দিকনির্দেশনা স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এক বছর আগে ভয়াবহ অপশক্তি জনতার প্রতিরোধে পালিয়ে গেছে। হাসিনার শাসনামলে একটি বিভীষিকাময় পরিবেশ ছিল, যেখানে আমরা বাড়িতে থাকতে বা ঘরে ঘুমাতে পারতাম না। হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে মনে হচ্ছে আমরা নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছি।
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ড. ইউনূস সবার শ্রদ্ধার পাত্র। আমাদের চাওয়া ছিল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্বাসন করেছে, ব্যাংকের লুটপাট বন্ধ করেছে এবং প্রশাসন ও বিচার বিভাগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনেছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশন সাত মাস ধরে বৈঠক করছে এবং একটি সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির মহাসচিব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে শতভাগ নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনার (ড. ইউনূস) উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ কোনো কোনো দলের জন্য পক্ষপাতিত্ব করছেন বলে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ আসছে। আমরা এটা শুনতে চাই না, বাংলাদেশের মানুষ এটা শুনতে চায় না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আর বিলম্ব নয়, আর কারও জন্য অপেক্ষা নয়, এখন নির্বাচনের রাস্তায় উঠে গেছে গাড়ি। এই গাড়ি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। ধানের শীষের পক্ষে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে হবে। মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপিকে ঘায়েল করার জন্য চারদিক থেকে চেষ্টা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেন। তার হাত ধরে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়েছিল। আজ দেশে ৩২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। যার অবদান এই জনশক্তি রপ্তানি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এক কোটি বেকারের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের কৃষি শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে পুনর্বাসন এবং চাকরি প্রদান করা হবে।
ভারতকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে, তারা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত আমাদের বন্ধু নয়, তারা সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে, পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না এবং আমাদের নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পলাতক ফ্যাসিস্টরা যেন অন্যের ওপর ভর করে ফিরে আসতে না পারে।
স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন। এতে আরও বক্তব্য দেন হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুলসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।