সাত বছর আগে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ দলটির ১৬৭ নেতাকর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজ এ মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এ আদেশ দেন।
অব্যাহতি পাওয়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, মিডিয়া উইংয়ের শামসুদ্দিন দিদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমুনুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায়, যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনজু, ঢাকা দক্ষিণের ছাত্রদলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিনসহ প্রমুখ।
মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মামলাটিতে মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। পরে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে আমরা তাদের স্থায়ী জামিনের আবেদন করেও দীর্ঘদিন সেটা পাইনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের স্থায়ী জামিন দেন আদালত। তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় এ মামলার দায় হতে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। আজ আদালত প্রতিবেদন গ্রহণ করে অভিযোগের দায় থেকে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় দেরিতে হলেও আমরা সুবিচার পেয়েছি।
ঘটনার পর আসামিরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দিতে নাইট এ্যাঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা রাস্তায় চলাচলরত সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালায় এবং প্রাইভেট কারসহ রাস্তায় আটকে থাকা আরও অনেক গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে পুলিশের কর্মক্ষমতা ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বিএনপি নেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল ফকিরাপুলের দিক থেকে শো-ডাউন করে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। এরপর নবী উল্লাহ নবী ও কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে অপর দুইটি মিছিল শো-ডাউন করে একই দিক থেকে আসতে থাকে এবং সর্বশেষ মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে ৮-১০ হাজার জনের একটি মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। তারা নয়াপল্টনে ভিআইপি রোড বন্ধ করে মিছিল ও শো-ডাউন করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। পুলিশ তাদের রাস্তার এক লেন ছেড়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার অনুরোধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়।
আরও বলা হয়, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে আসামিরা অবৈধ জনতাবদ্ধে বিএনপির পার্টি অফিস থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে নয়পল্টনে ভিআইপি রোডে হকস বে নামে গাড়ির শো রুমের উত্তর পাশে রাস্তায় পুলিশের একটি সরকারি ডাবল কেবিন পিকাপ পুড়িয়ে আনুমানিক মূল্য ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি করে। সরকারি কাজে বাধা দিয়ে অতর্কিতে পুলিশকে আক্রমণ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আসামিরা রাস্তার পাশে ডিউটিরত এসির (পেট্রোল-মতিঝিল) সরকারী মিটসুবিসি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পোড়া গাড়ির আনুমানিক মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। আসামিদের নিক্ষেপিত ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আসামিরা নাইট এ্যাগেল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং পর্যন্ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা রাস্তায় চলাচলরত সাধারণ জনগণের উপর আক্রমণ করে প্রাইভেটকারসহ রাস্তায় আটকে পড়া আরও অনেক গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে।
এ ঘটনায় পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা।