দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে শিগগিরই দেশে ফিরতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে ফিরে রাজধানীর গুলশান-২ এর এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন তিনি। এরই মধ্যে বসবাস উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়েছে বাড়িটি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বলা না হলেও তিনি যে সহসাই দেশে ফিরছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি। এমনকি গত ৬ অক্টোবর প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কবে দেশে ফিরছেন। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুব দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। তফসিল ঘোষণার আগে বা ঘোষণার পরপরই তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। সবকিছু নির্ভর করবে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। আর তারেক রহমান নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন কবে তিনি ফিরবেন।
কিছুদিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রকাশ্যে বলেছিলেন, নভেম্বরের শেষ দিকেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশা করছি। দলীয় পর্যায়ে তার এই মন্তব্যই প্রথম আনুষ্ঠানিক ইঙ্গিত হিসেবে আলোচনায় আসে। যদিও সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত হয়নি।
তবে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা এখন ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে পুনর্নির্ধারিত হয়েছে।
এদিকে দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেছেন, ডিসেম্বরের প্রথম দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই ছায়াঘেরা বাড়িটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মালিকানাধীন, যা সম্প্রতি তারেক রহমানের নামে নামজারি করা হয়। বাড়িটির অভ্যন্তর ও বাহ্যিক পরিবেশ তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। বাড়ির সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে এবং এটি এখন পুরোপুরি বসবাসযোগ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িটির ভেতর-বাইরের সংস্কারকাজ এখন প্রায় চূড়ান্ত। দেশে ফিরে তারেক রহমান এখানেই থাকবেন। খালেদা জিয়ার বাড়ির পাশেই ছেলের অবস্থান দলীয় কার্যক্রমের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে।
দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িটির মালিক বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার তাকে বাড়িটি বরাদ্দ দেন। এত দিন এটি খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকলেও নাম জারি ছিল না। কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকার এই বাড়ির নামজারির কাগজপত্র তার হাতে তুলে দেয়। বাড়িটিতে তিন বেড, ড্রয়িং, ডাইনিং, লিভিং রুম, সুইমিংপুলসহ আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে।
গুলশান-২ এর এভিনিউ রোডের শেষ মাথার ১৯৬ নম্বর বাড়িতে এত দিন ভাড়া ছিলেন বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের সিও। ছয় মাস আগে ওই কোম্পানি বাড়িটি ছেড়ে দেয়। এরপর বাড়িটি তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ হয়েছে।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন থেকে দেশে এসেছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। তিনি লন্ডন ফিরে যাওয়ার আগে গুলশানের প্রস্তুত হতে থাকা বাড়িটি পরিদর্শন করেন। তিনি বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তারেক রহমানের জন্য সেভাবেই প্রস্তুত করা হয়েছে বাড়িটি।
৫৯ বছর বয়সী তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে রয়েছেন। ২০০৯ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন এবং ধীরে ধীরে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তখন থেকেই তিনি বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করছেন, ভার্চুয়ালি সভা ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি পাঁচটি ভিন্ন মামলায় দণ্ডিত হন এবং তার বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি মামলা করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো পেন্ডিং মামলা নেই।