রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজকে নতুন কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে একটি ফ্যাকাল্টি (অনুষদ) হিসাবে রূপান্তর করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা-৬ বিএনপি মনোনীত আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেন।
বৃহস্পতিবার ( ২৭ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং ঐতিহাসিক কবি নজরুল কলেজ নতুন কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে একটি ফ্যাকাল্টি হিসাবে রূপান্তরিত করা যাবে না। কলেজের নাম পরিবর্তন করা যাবে না। এটি যারা করতে চাইবে তাদের অগ্রিম সতর্কবাণী দিচ্ছি।’
এর আগে এক সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা এ কলেজগুলোকে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন।
এদিকে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ‘ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে’ সরকার পরিবর্তনের পর সে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে গত ২৭ জানুয়ারি কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তখন এ কলেজগুলোতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চলছিল।
পরে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করে কলেজগুলোতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস এখনও শুরু হয়নি।
ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রস্তাব করে। বর্তমানে সংসদ না থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাদেশ আকারে জারির উদ্যোগ নেয়।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করে। প্রস্তাবিত প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাঠামোর বিষয়ে অংশীজনদের মতামত নিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
খসড়ায় সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী কলেজগুলো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানও চালু থাকবে।
খসড়ায় বলা হয়, স্কুল অব ল এন্ড জাস্টিস স্কুলটি কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ল ডিসিপ্লিন চালু করা হবে। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে ক্রিমিনোলজি ডিসিপ্লিন চালু করা হবে।
চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। প্রস্তাবিত নামটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্ধারণ করে।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজগুলো হলো, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।