দোয়া কবুলে আওয়াবিন নামাজের গুরুত্ব

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও আরও বিভিন্ন নামাজ রয়েছে যেগুলোকে ওয়াজিব, সুন্নত বা নফল বলা হয়। ফরজ নামাজ আদায় করে বান্দা আল্লাহর কাছ থেকে দায়মুক্ত হয়, কিন্তু নফল নামাজ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। নফল নামাজের তালিকায় অন্যতম একটি নামাজ হলো আওয়াবিন নামাজ। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত আওয়াবিন নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ দিতেন। শরিয়তের পরিভাষায় মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর যে নফল নামাজ পড়া হয় তাকে আওয়াবিন নামাজ বলে। হাদিসে এটা ‘সালাতুল আওয়াবিন’ অর্থাৎ ‘আল্লাহমুখীদের নামাজ’ নামে পরিচিত।

আওয়াবিনের সময় ও রাকাত 
মাগরিবের নামাজের পর আওয়াবিনের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং এশার আগপর্যন্ত তার সময় বাকি থাকে। এ নামাজ ৬ থেকে ২০ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। কোনো কোনো আলেম ছয় রাকাত আওয়াবিন পড়ার ক্ষেত্রে এভাবে মতামত দিয়েছেন যে, মাগরিবের পর দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা ব্যতীত চার রাকাত নফল নামাজ অতিরিক্ত পড়লে আওয়াবিনের ছয় রাকাত আদায় হয়ে যাবে এবং হাদিসে বর্ণিত আওয়াবিনের সওয়াবও লাভ করবে। 

তবে কিছু কিছু আলেমের মতানুসারে আওয়াবিনের ছয় রাকাতকে মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা থেকে অতিরিক্ত বলা হয়েছে (তিরমিজি : ৪৩৭; ইলমুল ফিকহ : ২/৪৮)। 

তবে রাসুল (সা.) ৬ রাকাতই অধিকাংশ সময় পড়তেন। সাহাবায়ে কেরামও এ নামাজের প্রতি খুব গুরুত্ব দিতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় অংশ মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে এ নামাজ আদায় করতেন (নাইলুল আওতার : ৩/৫৪)। 

তাবেয়ি, তাবে তাবেয়ি ও পূর্বসূরি সবাই এর ওপর আমল করেছেন। এখনও অনেকে নিয়মিত এ নামাজ আদায় করেন। এ নামাজ পড়ার পদ্ধতি হলো দুই দুই রাকাত করে তিন সালামে ছয় রাকাত আদায় করা। 

আওয়াবিন নামাজে সওয়াবের পরিমাণ 
আওয়াবিন নামাজ সংখ্যায় কম কিন্তু এর সওয়াবের পরিমাণ বেশি। যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত আওয়াবিন নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে বারো বছর ইবাদত করার সমপরিমাণ সওয়াব দান করবেন। এটা হলো অতি অল্প সময়ে দীর্ঘকালের সওয়াব অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ উপায়। তাই আমাদের জন্য উচিত প্রতিদিন মাগরিব নামাজের পর কিছু সময় আওয়াবিনের জন্য ব্যয় করা। 

এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়ে, যার মধ্যে কোনো মন্দ কথাবার্তা বলেনি, তা হলে তার জন্য এ ছয় রাকাত বারো বছর ইবাদতের বরাবর করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ : ১২২২)

জান্নাতে গৃহনির্মাণ 
আওয়াবিন নামাজ একটি ফজিলত ও মর্যাদাময় নামাজ। এ নামাজ সলফে সালেহিনরা গুরুত্বসহকারে আদায় করতেন। এ নামাজের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। দুনিয়ার জীবনে এ সামান্য আমল করতে পারলে বান্দা বেহেশতের শোভনীয় ঘরের অধিকারী হবে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহনির্মাণ করেন।’ (তিরমিজি : ৪৩৭; ইবনে মাজাহ : ১৪৩৫)

মাগফিরাত লাভ
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার গুনাহ বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমা করে থাকেন। সেসব উপায়ের মধ্যে আওয়াবিন নামাজ অন্যতম। এ ছাড়া মাগফিরাতের দরজা বান্দার জন্য আল্লাহ কাছে সবসময় উন্মুক্ত। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন আওয়াবিন নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে মাগফিরাত কামনা করা।