শীতকাল মানেই দীর্ঘ রাত এবং ঠান্ডা আবহাওয়া। এই সময়ে জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার প্রবণতা কম থাকে, ফলে অলসতা, ঘুম ও আড়মোড়া ভাবের মধ্যেই অনেকটা সময় কেটে যায়।
আলেমদের মতে, ঘরে শুয়ে-বসে কাটানো এই অলস সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে সহজেই আমলের পাল্লা ভারী করা সম্ভব। শীতের এই সময়গুলোতে কয়েকটি সহজ ইবাদতে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
জিকির-দোয়া
আল্লাহ তায়ালার জিকির সব সময় করা যায়। জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হয় এবং অন্তর প্রশান্ত থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)
নবী (সা.)-কে কেউ একবার জিজ্ঞেস করেছিল, ইসলামের বিধি-বিধান অনেক বেশি, সব মনে রাখা কঠিন। আমাকে এমন একটি আমল সম্পর্কে বলুন, যা আমি সবসময় করতে পারি। নবী (সা.) উত্তর দিলেন, তোমার জিহ্বা যেন সবসময় আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত থাকে। (তিরমিজি)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) সব সময় আল্লাহর জিকির করতেন। (সহিহ মুসলিম)
শীতকালে ঘরে শুয়ে বসে কাটানো সময়টাতে জিকির ও আল্লাহর কাছে দোয়া করে কাটানো যেতে পারে।
কোরআন তিলাওয়াত ও হাদিস পাঠ
কোরআন তিলাওয়াতকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তারা এমন ব্যবসার আশাবাদী, যা কখনও লোকসান হয় না, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত গুণগ্রাহী। (সুরা ফাতির, আয়াত, ২৯-৩০)
যারা সবসময় কোরআন তিলাওয়ত করেন তাদের বিশেষ মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে হাদিসে। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কিছু মানুষ আল্লাহর পরিজন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তেলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তার বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ: ২১৫)
নফল নামাজ
মাদান ইবনে আবু তালহা (রহ.) বলেন, ‘আমি নবীজির আজাদকৃত (স্বাধীন করে দেওয়া) গোলাম সাওবান (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে!’ তিনি বলেন, এভাবে তিন বার জিজ্ঞাসার পর তিনি বললেন, আমিও নবী কারিম (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন—
‘তুমি বেশি বেশি সিজদা করো (নফল নামাজ)। কেননা তোমার প্রতিটি সিজদার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং একটি গুনাহ মিটিয়ে দেবেন।’
মাদান বলেন, পরবর্তী সময়ে আমি আবু দারদা (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনিও একই উত্তর দিয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৮৮)