মানুষের জীবনে ক্ষমতা, সম্মান, সফলতা ও ব্যর্থতা— সবকিছুই আসে পরিবর্তনের ধারায়। আজ যে ব্যক্তি উচ্চাসনে, কাল সে নীচে নেমে যেতে পারে; আবার যে অবহেলিত, আল্লাহ চাইলে তাকেই সম্মানের শিখরে তুলে ধরেন। এ বাস্তবতার পেছনে কোনো কাকতালীয় ঘটনা নেই—বরং এর নেপথ্যে রয়েছে আল্লাহ তাআলার সর্বময় ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা। পবিত্র কুরআনের সুরা আল-ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে এই চিরন্তন সত্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
(হে রাসুল! আপনি) বলুন, ‘হে আল্লাহ! আপনি সমুদয় রাজ্যের মালিক, যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন আর যার থেকে ইচ্ছে রাজ্য কেড়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছে সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছে অপদস্থ করেন, আপনারই হাতে সব রকম কল্যাণ, নিশ্চয়ই আপনি সকল বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ২৬)
‘মালিকুল মুলক’— সর্বময় রাজত্বের অধিকারী
এই আয়াতে আল্লাহ নিজেকে ‘মালিকুল মুলক’— অর্থাৎ সর্বময় রাজত্বের অধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দুনিয়ার কোনো ক্ষমতা, কোনো সিংহাসন কিংবা কোনো সম্মান স্থায়ী নয়। আল্লাহ যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আবার যাকে চান তা কেড়ে নেন। সম্মান ও অপমান—দুটোই তার ইচ্ছাধীন।
এ আয়াত মানুষকে অহংকার থেকে দূরে থাকতে শেখায়। কারণ ক্ষমতা ও মর্যাদা যদি আল্লাহর দান হয়, তবে তা নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। একইভাবে বিপদ, অবনতি বা অপমান এলে হতাশ হওয়ারও কারণ নেই— কারণ আল্লাহই সর্বাবস্থার মালিক।
‘বিয়াদিকাল খাইর’—কল্যাণের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে
আয়াতের একটি গভীর বার্তা হলো— ‘বিয়াদিকাল খাইর’— সব কল্যাণ আল্লাহর হাতেই। মানুষ অনেক সময় ক্ষমতা, অর্থ বা প্রভাবকেই কল্যাণ মনে করে। অথচ প্রকৃত কল্যাণ হলো ঈমান, তাকওয়া ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ যাকে চান দুনিয়ার ক্ষমতার মাধ্যমে পরীক্ষা করেন, আবার যাকে চান অভাবের মাধ্যমে সম্মানিত করেন।
হাদিসের আলোকে আয়াতের ব্যাখ্যা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘নিশ্চয় আল্লাহই দানকারী, আর আমি বণ্টনকারী।’ (বুখারি ৩১১৬, ১/৩৯, ৩/১১৩৪, ৬/২৬৬৭ ও মুসলিম ১০৪৪, ১/৭১৯)
আরেক হাদিসে নবিজী (সা.) বলেন— ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। সে নিজেকে নিজে ছোট মনে করে কিন্তু মানুষের চোখে খুবই মহান ও সম্মানিত হয়।’ (মিশকাত ৫১১৯, বায়হাকি ৮১৪০)
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে—সম্মান, ক্ষমতা ও মর্যাদা মানুষের প্রচেষ্টা দ্বারা এলেও তার চূড়ান্ত ফয়সালা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়।
মানুষের জন্য করণীয়—
> ক্ষমতা ও সাফল্য পেলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া
> সম্মান পেলে বিনয়ী থাকা
> বিপদ বা অবনতি এলে ধৈর্য ধারণ করা
> সব অবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। কারণ তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
সুরা আল-ইমরানের এই আয়াত মানুষকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যের দিকে আহ্বান করে— সব ক্ষমতা ও কল্যাণের মালিক একমাত্র আল্লাহ। দুনিয়ার রাজত্ব ক্ষণস্থায়ী, সম্মান অস্থায়ী; কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি চিরস্থায়ী। তাই দুনিয়ার সব মানুষের উচিত ক্ষমতার মোহে নয় বরং আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করা। কারণ যার হাতে রাজত্ব, সম্মান ও কল্যাণ— তার ওপর ভরসা করাই হলো প্রকৃত সফলতা।