আজ ১১ রবিউস সানি ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম। হিজরি ৫৬১ সালের এ দিন বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক ও বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর দিনটিকেই ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’ হিসেবে পালন করা হয়।
দিনটি উপলক্ষে ইসলামী ফাউন্ডেশন আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সুফিবাদের প্রতিষ্ঠাতা হজরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) স্মরণে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
প্রতিবছর রবিউস সানির এগারো তারিখ বা মাসিকভাবে ইসলামী ক্যালেন্ডারের প্রতি মাসের এগারো রবিউস সানি দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে।
ইসলামী ফাউন্ডেশন আজ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দিবসটি পালনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আলোচনা সভায় দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদরা অংশ নেবেন।
হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)
হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) ছিলেন একজন মহান ইসলামী পণ্ডিত, সুফিসাধক এবং আধ্যাত্মিক নেতা; যিনি ১১১৬ সালে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং বিশেষত সুফিবাদে তার অবদান ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার জন্য বিখ্যাত। তাকে ‘গাউসুল আজম’ বা ‘সর্বোচ্চ সাহায্যকারী’ হিসেবেও ডাকা হয়। তার শিক্ষা অনুসারে, আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস, বিনম্রতা এবং মানবতার সেবা ছিল জীবনের মূল লক্ষ্য।
ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম উদযাপন
ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম হিজরি বর্ষপঞ্জির ১১তম মাস রবিউস সানির ১১ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। ‘ফাতেহা’ শব্দটির অর্থ হলো মৃত ব্যক্তির আত্মার জন্য বিশেষ প্রার্থনা বা দোয়া করা, এবং ‘ইয়াজদাহম’ অর্থ ১১। সুতরাং, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম হলো তার মৃত্যুবার্ষিকীর ১১তম দিন উপলক্ষে করা ফাতেহা বা দোয়া।
এই দিনে মুসলিম সম্প্রদায় বিশেষ করে সুফি তরিকায় বিশ্বাসীরা, কুরআন তেলাওয়াত করে, হজরত জিলানি (রহ.)-এর প্রতি সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন দোয়া ও মোনাজাত করে। তার আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং জীবনের দৃষ্টান্তকে স্মরণ করে, অনেক মসজিদ এবং খানকাহে বিশেষ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া দান-খয়রাত, গরিবদের মাঝে খাদ্য বিতরণ এবং মানবতার সেবা করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়।
ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমের গুরুত্ব
ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম শুধুমাত্র একটি স্মরণীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও নীতি অনুসরণ করা, বিশেষ করে তার বিনম্রতা, আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা এবং মানবতার প্রতি তার ভালোবাসা, মুসলিমদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম ইসলামী সংস্কৃতির একটি অংশ যা মুসলিমদের আধ্যাত্মিক জীবন ও ইসলামী ঐতিহ্যকে জীবিত রাখে। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রার্থনা নয়, বরং একত্রিত হয়ে আল্লাহর পথে জীবন পরিচালনা করার একটি শিক্ষা। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর শিক্ষা এবং তার জীবনধারার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় তার স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখে।