মুসলিম উম্মাহর দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত, বরকত ও নাজাত পেতে হলে আমাদেরকে এখনই নিতে হবে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি। এখন যত ভালো প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করব রমজান মাসে সিয়াম সাধনাও ততো মজবুত হবে আমাদের। একজন মুমিনের জন্য রমজান মাসের প্রস্তুতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাহাবিদের জীবনী পড়লে দেখা যায় রমজান উপলক্ষে তারা ইবাদতের পরিকল্পনা করতেন। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে, রমজান মাস, এতে মানুষের পথপ্রদর্শক ও সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন। এবং ন্যায় অন্যায়ের মীমাংসারূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে- কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোজা রাখে। আর যে রোগী বা মুসাফির তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না, যাতে তোমরা নির্ধারিত দিন পূর্ণ করতে পার ও তোমাদেরকে সৎ পথ পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতে পার, আর তোমরা কৃতজ্ঞ হলে হতে পার। (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
রমজানের প্রস্তুতি: রমজানের প্রস্তুতি নিতে আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি
১. নিয়ত করা
রোজা রাখার জন্য সর্বপ্রথম মানসিকভাবে আমাদের নিয়ত করতে হবে যেন সুস্থভাবে সম্পূর্ণ রোজা রাখা যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজাগুলো রাখে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
রাসুল (স.) আরও বলেছেন, তাদের জন্য দুর্ভাগ্য যারা রমজান মাস পেল কিন্তু গুনাহ মাফ করাতে পারল না।
২. তওবা করা
তওবা করা ওয়াজিব। অতীতের ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে যেন পূত-পবিত্র ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে রমজানে আল্লাহর আনুগত্য করা যায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার। (সুরা আন-নূর, আয়াতা: ৩১)
নবী করিম (স.) বলেছেন, হে লোকেরা, আপনারা আল্লাহর কাছে তওবা করুন। আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি। (ইমাম মুসলিম, ২৭০২) অর্থাৎ, রমজানে অবশ্যই বেশি তওবা-ইস্তেগফার আদায় করতে হবে।
৩. রমজানের আগমনে খুশি হওয়া
রমজানের আগমনে সবার খুশি হওয়া উচিত। একজন মুসলমানের জন্য রমজান মাস হলো আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত।
পবিত্র কুরআনে আছে, তাদের বলে দাও, আল্লাহর এই দান ও রহমতের প্রতি সবারই আনন্দিত হওয়া উচিত; তা দুনিয়াবি সম্পদ হতে বহুগুণে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৮)
৪. শাবান মাসে রোজা রেখে প্রস্তুতি আরম্ভ
আমাদের সবার উচিত রমজান মাসের প্রস্তুতি স্বরূপ শাবান মাস থেকেই রোজা শুরু করা।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এমনভাবে রোজা পালন করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর রোজা ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে রোজা ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর রোজা পালন করবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ (স.) কে রমজান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসের গোটা অংশ সাওম পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক রোজা পালন করতে দেখিনি। (বুখারি ১৮৬৮, মুসলিম, ১১৫৬)
৫. কুরআন তেলাওয়াত চর্চা করা
রমজান মাসকে বলা হয় কুরআন নাজিলের মাস। কুরআন তেলওয়াত করা সুন্নত এবং শোনাও। রমজান মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলওয়াত করতে হবে। সাহাবিরা অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে দ্বিগুণ কুরআন খতম দিতেন।
হজরত সালামাহ ইবন কুহাইল বলেছেন, (রমজানের আগে) শাবান মাসকে ক্বারীগণের মাস বলা হতো।
হজরত আবু বকর আল-বালাখি বলেছেন, রজব মাস হলো বীজ বপনের মাস, শাবান মাস হলো ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমজান মাস হলো ফসল তোলার মাস। তাই বেশি বেশি আল্লাহর কালাম পাঠ করতে হবে।
৭. অন্যায় থেকে বিরত থাকা
ছোট-বড় সকল গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। শির্ক থেকে মুক্ত থাকা ও হিংসা বিদ্বেষ মুক্ত থাকা উচিত। কারো হক নষ্ট হয় এমন কাজ করা অনুচিত। রমজানের ইবাদত নষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কা জনক কাজ পরিহার করতে হবে।
৮. পারিবারিক ভাবে রমজানের প্রস্তুতি
পরিবারের সকল সদস্য একত্রে রোজার বিধি-বিধান আলোচনা করা ও সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। ছোট শিশুদের রমজানে রোজা রাখতে উৎসাহিত করতে হবে।
এছাড়া রমজানের বিশেষ তিনটি আমল হলো কম খাওয়া, কম ঘুম ও কম কথা বলা।