ইফতারে ছোলা, পেঁয়াজু-বেগুনির রীতি যেভাবে এলো

রমজান মাসে বাংলাদেশের ইফতারে পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, চপ, এবং মাংসের তৈরি কাবাবসহ নানা মুখরোচক খাবার অনেকটা যেন অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

সারা বছর এই ধরনের খাবার ততোটা গুরুত্ব না পেলেও, বাংলাদেশের সব বাড়িতেই ইফতারের প্রধান আকর্ষণ নানারকম ভাজা-পোড়া খাবার। শুধুমাত্র বাড়িতেই নয়, এই সময় খাবারের দোকানগুলোতেও এরকম মশলাদার ইফতারি বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়।

রমজানের পুরো মাসজুড়ে এই রকম মুখরোচক খাবার খাওয়া হলেও বছরের অন্য সময় এভাবে নিয়মিতভাবে খাওয়া হয় না।

ধর্মীয় বিধিবিধানেও ইফতারে এরকম মুখরোচক খাবারের রীতির উল্লেখ আছে বলে শোনা যায় না। তাহলে বাঙালির ইফতারের প্লেটে এরকম মুখরোচক ভাজা-পোড়া খাবার জায়গা করে নিলো কীভাবে?

ইসলামের ইতিহাসবিদরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে এই উপমহাদেশে আসা এবং শাসন করা নানা জাতি গোষ্ঠীর নানা ধরনের সংস্কৃতির মতো খাবারও এখন এই অঞ্চলের মানুষের খাদ্য তালিকায় মিশে গেছে। সেভাবেই ইফতারের এই খাবারের তালিকায় ছাপ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের খাবারের সংস্কৃতির।

ইফতারে নানা জাতিগোষ্ঠীর খাবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নুসরাত ফাতেমা বলছেন, আমাদের ইফতারে যেসব খাবার খাওয়া হয়, তার বড় অংশটি এসেছে পার্সিয়ান বা মুঘল খাবারের তালিকা থেকে। এক সময় মুঘলরা ভারতবর্ষ শাসন করতো। তারা যখন ঢাকা শাসন করেছেন, তাদের সেই খাদ্য তালিকা তখনকার ঢাকার লোকজন গ্রহণ করেছে। এরপর আস্তে আস্তে সেটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলছেন, আপনি যখন এমনিতে খাবেন, তখন হয়তো ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাচ্ছেন। কিন্তু যখন ইফতারির প্রসঙ্গে যাবেন, তখন দেখবেন, সেখানে নানা জাতিগোষ্ঠীর খাবার মিশে গেছে। 

কয়েকটি খাবারের উদাহরণ দিয়ে বলেন..

খেজুর: মোহাম্মদ (সা.) ইফতারের সময় খেজুর খেতেন। ফলে ইফতারের সময় খেজুর খাওয়াকে সুন্নত বলে মনে করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের থেকে এই রীতিটি সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বেই ইফতারের সময় খেজুর অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বলে মনে করা হয়।

ছোলা: এটা আফগানদের প্রিয় খাবার, তাদের কাছ থেকে ভারতবর্ষের, বাংলাদেশের মুসলমানরা গ্রহণ করেছে। তারা কাবুলি চানা বা কাবুলি ছোলা খেয়ে থাকে। সেখান থেকেই এটা খাওয়ার চল এসেছে। শবেবরাতের সময় যে বুটের হালুয়া তৈরি করা হয়, সেটার আসল নাম যেমন হাবশি হালুয়া, এটাও আফগানদের একটা খাবার।

তবে ভারত বা বাংলাদেশে এসে সেটা আরও মশলা, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে মুখরোচক করে রান্না করা হয়ে থাকে। সেটার সাথে মুড়ি খাওয়ার চলও এই অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব উদ্ভাবন।

কাবাব-হালিম-বিরিয়ানি: মুঘল খাবারের মধ্যে পারসিক খাবারের প্রভাবটা অনেক বেশি ছিল। তারাই ইফতারে বিরিয়ানি, কাবারের মতো খাবার খেতো। সেটা দেখে এই অঞ্চলের বনেদি মানুষজনও খেতে শুরু করে।

এখনো ইরান, আরব আমিরাত, সৌদি আরব ইত্যাদি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ইফতারির সময় কাবাব সহযোগে বিরিয়ানি বা পোলাও খাওয়ার চল রয়েছে।

পেঁয়াজু-বেগুনি-চপ: এটা উত্তর ভারত থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এলাকার খাবারে ছড়িয়ে পড়েছে।

শরবত: ইফতারে শরবত খাওয়ার রীতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে রয়েছে। পানির পিপাসা থেকে স্বাদ, মিষ্টি ও সুগন্ধি শরবত খাওয়ার চল চালু হয়েছে বলে মনে করেন ইসলামী ইতিহাসবিদরা।