ঈদুল আজহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি। এটি কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়।
ঈদুল আজহা মূলত আরবি বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’। এ দিনটিতে মুসলিম সম্প্রদায় ফজরের নামাজের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে। এটি মহান আল্লাহর নির্দেশ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-
‘অতএব তোমার রবের উদ্দেশেই নামাজ পড়ো এবং নহর করো।’ (সুরা আল কাউছার, আয়াত: ২)
ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এ নামাজের পদ্ধতি স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়। ঈদের নামাজ ছাদবিহীন খোলা জায়গায় আদায় করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করতেন। যদি খোলা স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া যাবে।
বছরে দুইবার ঈদের নামাজ পড়ার কারণে অনেকেই ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া-তাকবির ভুলে যান। তাই ঈদের নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া-তাকবির তুলে ধরা হলো-
ঈদের নামাজের নিয়ত
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় অর্থ : আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- ‘আল্লাহু আকবার’।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
>> ইমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত বাঁধা। তাকবিরে তাহরিমার পর ছানা পড়া- ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
>> এরপর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।
>> তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়। আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া। সুরা ফাতেহা পড়া। সুরা মিলানো। এরপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
>> এরপর দ্বিতীয় রাকাতে বিসমিল্লাহ পড়া। সুরা ফাতেহা পড়া। সুরা মিলানো। সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া। তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়।
>> এরপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া। সেজদা আদায় করা। বৈঠকে বসা, তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
ঈদের নামাজের তাকবির
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
ঈদের নামাজের খুতবা শোনা
নামাজের পর ইমাম সাহেবের দুইটি খুতবা দেওয়া। ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে।
ঈদের দিনের সুন্নত ও মোস্তাহাব আমল
১. মিসওয়াক করা সুন্নত।
২. গোসল করা সুন্নত।
৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত।
৪. ঈদুল আজহায় কিছু না খেয়ে এবং ঈদুল ফিতরে কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত।
৫. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মোস্তাহাব।
৬. ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচুস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত।
৭. সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব।
৮. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা এবং কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মোস্তাহাব।
৯. আনন্দ- অভিবাদন বিনিময় করা মোস্তাহাব।
(ফতোয়ায়ে শামি : ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮, হেদায়া: ২/৭১, বুখারি: ১/১৩০, ইবনে মাজাহ: ৯২)