বোধনের মাধ্যমে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক শুভসূচনা আজ

শারদীয় দুর্গোৎসবের পবিত্র সূচনা হচ্ছে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে। এই বোধনের মধ্য দিয়েই দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, যদিও মূল পূজার কার্যক্রম শুরু হবে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) , মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে।

বাংলার ঘরে ঘরে এখন উৎসবের আমেজ। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা সাজানো, আলোকসজ্জা, ধূপ-ধুনো, ঢাক-ঢোল সব মিলিয়ে যেন এক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।

হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, বোধন মানে দেবী দুর্গাকে জাগ্রত করা। বিভিন্ন পুরাণ মতে, রামায়ণে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে রাবণ বধের উদ্দেশ্যে অকালে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। সেই থেকে শরতের দুর্গাপূজাকে অকালবোধন নামেও অভিহিত করা হয়। তবে বসন্তকালের বাসন্তী পূজায় বোধনের প্রয়োজন পড়ে না।

'বোধন' শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্তি। সাধারণত শরৎকালের দুর্গাপূজায় ষষ্ঠী তিথির সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের বিধান থাকলেও এবার পঞ্জিকার বিশেষ নিয়ম অনুসারে সেই সময় সন্ধ্যাবেলায় যথাযথভাবে মিলছে না। ফলে শাস্ত্র মতে আজ পঞ্চমীর সন্ধ্যায়ই বোধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, তিথির সন্ধিক্ষণে উপযুক্ত সময় না থাকলে বোধন এগিয়ে পঞ্চমীতে স্থানান্তর করা হয়ে থাকে।

এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটছে গজে, অর্থাৎ হাতির পিঠে। শাস্ত্র মতে, দেবীর হাতিতে আগমন শুভ লক্ষণের প্রতীক বয়ে আনে শস্য-সমৃদ্ধি ও শান্তি। তবে মর্ত্য ত্যাগে দেবী দোলায়, অর্থাৎ পালকিতে চড়বেন যা কিছুটা অস্থিরতা বা পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।

আজকের বোধনের মধ্য দিয়ে রোববার পালিত হবে মহাষষ্ঠী। থাকবে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা। পরের দিন মহাসপ্তমী, তারপর মহাঅষ্টমী ও মহানবমী, আর শেষ হবে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে।

এভাবেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও সামাজিক সম্প্রীতির এক অপূর্ব মিলন ঘটায় শারদীয় দুর্গোৎসব। আজ বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো সেই মহোৎসবের পথচলা।

ঢাকায় এ বছর ২৫৯টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ৭টি বেশি। আর সারা দেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি যা গতবারের চেয়ে প্রায় এক হাজার বেশি। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, পূজা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে বাঙালির এক সামষ্টিক সাংস্কৃতিক উৎসব।

দুর্গাপূজাকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্বেচ্ছাসেবক ও পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যরাও সজাগ রয়েছেন, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে উদ্‌যাপিত হয় শারদীয় এই মহান উৎসব।