হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর প্রথম নারী সাহাবী

ইসলামের ইতিহাসে যাঁরা প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে যার নাম উঠে আসে, তিনি হলেন হযরত খাদিজা (রা.)। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রথম স্ত্রী, সাহসী সহযোগী এবং ইসলামের প্রথম নারী মুমিন হিসেবে তিনি অনন্য মর্যাদার অধিকারী।

আল্লামা ইবনে ইসহাক (রহ.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণ করেন খাদিজা (রা.)। এরপর পুরুষদের মধ্যে আলী ইবনে আবি তালিব (রা.), তারপর জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) এবং পরে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন।’

ইসলাম গ্রহণকারী প্রথমদিকের শীর্ষ সাহাবিদের মধ্যে আবু বকর (রা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন আরও পাঁচ মহান সাহাবি উসমান ইবনে আফফান (রা.), জোবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.), তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.), সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)। তারা সকলেই আবু বকর (রা.)-এর আহ্বানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করেন।

তবে এই সকল সাহাবিদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনেন হযরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.)। তিনি ছিলেন মক্কার একজন সম্মানিত, ধনী ও সফল ব্যবসায়ী। পিতার নাম খুওয়াইলিদ এবং মাতার নাম ফাতিমা। বংশপরিচয় ও সম্পদের দিক থেকে যেমন ছিলেন সমৃদ্ধ, তেমনি ছিলেন চরিত্রে উচ্চ, পরিশ্রমী ও বিচক্ষণ।

খাদিজা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আকৃষ্ট হন তার সততা, বিশ্বস্ততা ও কর্মনিষ্ঠতা দেখে। ২৫ বছর বয়সে নবীজি (সা.) এর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। খাদিজা (রা.) তখন ৪০ বছর বয়সে। তাঁদের সংসার ছিল প্রেম, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও ত্যাগের এক অনন্য নিদর্শন।

প্রথম ও সর্বপ্রথম সাহাবি হিসেবে হযরত খাদিজা (রা.) ইসলামের শুরুতেই যেভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে সহায়তা করেছেন, তা ছিল অনন্য। গুহা হিরা থেকে ফিরে এসে নবীজি (সা.) যখন প্রথম ওহি লাভে আতঙ্কিত ও ভয়ে, তখন খাদিজা (রা.) তাঁকে সাহস জুগিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেন, দুর্বলদের সাহায্য করেন, অতিথি আপ্যায়ন করেন, বিপদগ্রস্তদের পাশে থাকেন।’

ইসলাম প্রচারের শুরুতে হযরত খাদিজা (রা.) তার সমুদয় ধন-সম্পদ ইসলামের খিদমতে বিলিয়ে দেন। কুরাইশদের বিরূপ আচরণ, সামাজিক বয়কট, কঠিন সময় সবকিছুতে তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ছায়াসঙ্গী।

তিনি ইসলামের প্রথম নারী যিনি অজু করে নামাজ আদায় করেন এবং সব সন্তানের মা হিসেবে নবীজির (সা.) পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পুত্র ইবরাহিম ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্য সব সন্তানের জননী ছিলেন তিনি।

হযরত খাদিজা (রা.) ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এ বছরটিকে নবীজি (সা.) নিজের জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক বছর হিসেবে স্মরণ করতেন। এই বছরই রাসুলুল্লাহ (সা.) তার প্রিয় চাচা আবু তালিবকেও হারান। ইতিহাসে এটি ‘আমুল হুযন’ (শোকের বছর) নামে পরিচিত।

ইসলামের ইতিহাসে হযরত খাদিজা (রা.) এর স্থান অমলিন ও উচ্চতম। তিনি ছিলেন সাহস, ত্যাগ, ভালোবাসা ও ঈমানের প্রতীক। তার অবদান শুধু একজন স্ত্রীর বা সাহাবির সীমায় আবদ্ধ নয় তিনি ছিলেন ইসলামের পথপ্রদর্শক, যার দান, মমতা ও ঈমান ইসলামের ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছিল।