পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ নিয়ে মানুষের কৌতূহল কম নেই। সময় যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে কৌতূহল। চাঁদে হেঁটে বেড়ানো, মহাকাশ যান পাঠানো, সেখান থেকে মাটি, পাথর তুলে নিয়ে আসার ঘটনা নিত্যদিন ভিড় জমাচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। আর এবার শোনা গেল, চাঁদের মাটিতেই তৈরি হবে রেলপথ। ইতোমধ্যেই সেই খবর ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাকে চাঁদের মাটিতে রেল নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন সরকার। এরই মধ্যে সেখানে রেল ব্যবস্থা পরিচালনার সব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তারা। এই রেলপথে সহজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাতায়াত করা যাবে বলে জানায় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে নাসা বলছে, চাঁদের সেই রেলে চলবে রোবট ট্রেন। আগামী ত্রিশের দশকে সেখানে ঘাঁটি বানিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে নাসার। এরই অংশ হিসেবে সেখানে দ্রুত ও সহজে যন্ত্রাংশ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ার জন্য রেল ব্যবস্থা রাখা হবে।
পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যান পাঠিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদে থেকে সেই গবেষণা আরও সহজ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে কারণে সেখানে ঘাঁটি বানাতে চাইছেন তারা। আর তাতে কাজে লাগানো হবে রোবোটিক লুনার সারফেস অপারেশনস।
নাসা বলছে, এরই মধ্যে ফ্লেক্সিবল লেভিটেশন অন আ ট্রাক (এফএলওএটি) ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় তিন স্তরের রেললাইনের ওপর দিয়ে সহজে এবং কোনো বাধা ছাড়াই যেতে পারবে রোবট ট্রেন। এ ছাড়া সৌর প্যানেলও থাকবে। আর এসব ট্রেন হবে বিশেষভাবে তৈরি। এটি কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে না, নিজে নিজেই কাজ করবে। সেখানে থাকবে রেলস্টেশন। আর এসব ট্রেন কাজ করবে ম্যাগনেটিক ব্যবস্থায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানায়, চাঁদ নিয়ে ডারপা’র ১০ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনার অংশ এটি। ভবিষ্যতে চাঁদের অর্থনীতিকে সমর্থন করা এর লক্ষ্য। বিশ্বের বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চাঁদে নিজেদের স্থায়ী উপস্থিতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এ দশক শেষ হওয়ার আগেই চাঁদে নিজস্ব ঘাঁটি গড়ে তুলতে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে আমেরিকা ও চীন। এছাড়া আর্টেমিস মিশনের মাধ্যমে চাঁদে পুনরায় মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে নাসা।
নর্থরোপ গ্রাম্যান এক বিবৃতিতে জানায়, পরিকল্পিত এ রেলপথ নেটওয়ার্কটি চন্দ্রপৃষ্ঠজুড়ে বাণিজ্যিক উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য মানুষ, পণ্য ও বিভিন্ন সম্পদ পরিবহণ করতে পারবে। এটি আমেরিকা ও এর আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পরিকল্পিত মহাকাশ অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
লুনার আর্কিটেকচার ক্যাপাবিলিটি স্টাডি (লুনা-১০) প্রকল্পে বাছাই হওয়ার পর কোম্পানিটি এখন চাঁদের পৃষ্ঠে পুরোপুরি কাজ করবে এমন এক রেল ব্যবস্থার প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ করছে। এছাড়া চাঁদে একটি ট্রেন নেটওয়ার্ক নির্মাণ, পরিচালনা ও মেরামতের বিভিন্ন উপায় পরীক্ষা করে দেখবে কোম্পানিটি।
পৃথিবী থেকে কেউ চাঁদে গিয়ে সেখানে রেললাইন বানাবেন না। গোটা ব্যবস্থা তৈরি করেই চাঁদে পাঠানো হবে। মহাকাশযান থেকে সরাসরি চাঁদের মাটিতে ‘ল্যান্ড’ করবে রেললাইন। নাসার বক্তব্য, চাঁদের এই রেললাইনে বিভিন্ন আকারের পেলোড পরিবহণ করা যাবে। গতি থাকবে প্রতি সেকেন্ডে ০.৫ মিটার। প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে পারবে পেলোডগুলি।