মহাবিশ্বের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এক অনন্য অর্জনের সাক্ষী হলো বিজ্ঞানসমাজ। পৃথিবী থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত অ্যাবেল এস১০৬৩ নামের একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের অবিশ্বাস্য ছবি তুলে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বৈজ্ঞানিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করে দিয়েছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ)-র ভাষ্য অনুযায়ী, এটাই হলো টেলিস্কোপটির ধারণকৃত একক কোনো গন্তব্যের সবচেয়ে গভীর ও বিস্তৃত চিত্র।
জানা যায়, এই ছবিটি ধারণ করতে সময় লেগেছে ১২০ ঘণ্টারও বেশি। গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্বের একেবারে প্রাচীনতম পর্বে ফিরে তাকানোর সুযোগ করে দিয়েছে এই চিত্র। কারণ, ছায়াপথ থেকে আলো আসতে যে সময় লাগে, তা মানেই আমরা অতীতকে দেখছি— সময়ের এক জীবন্ত জানালা।
চিত্রটিতে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ছায়াপথের ঘূর্ণায়মান আলোর ছাপ দেখা গেছে। এটি স্পষ্ট করেছে মহাবিশ্বের অন্ধকার যুগ পার হওয়ার পরের সেই সময়, যেটি ‘মহাজাগতিক ভোর’ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সময়ের ছায়াপথ গঠনের ধরন এবং বৈশিষ্ট্য বোঝার এক অমূল্য সূত্র দিচ্ছে এই ছবিটি।
ধারণা করা হয়, ছবিতে দেখা ছায়াপথগুলো সেই সময়ের— যখন মহাবিশ্বের বয়স ছিল মাত্র কয়েক লাখ বছর। এই সময়েই গ্যালাক্সির প্রাথমিক কাঠামো তৈরি হচ্ছিল, আলো তৈরি হচ্ছিল, আর মহাবিশ্ব নিজেই ধীরে ধীরে প্রাণ পাচ্ছিল।
ছবিটি তৈরি করতে নিয়ার ইনফ্রারেড স্পেকট্রামে ধারণকৃত আলোকতরঙ্গের বিভিন্ন স্তরকে একত্রিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গঠিত হয় এমন একটি চিত্র, যা সাধারণ টেলিস্কোপে ধরা পড়ে না।
গবেষকরা এখন ছবির গ্যালাক্সি ক্লাস্টারটির চারপাশের আলো ও গঠন খুঁটিয়ে দেখছেন। উদ্দেশ্য— বোঝা যে প্রাচীন গ্যালাক্সিগুলো কেমন ছিল, কত বড় ছিল এবং তাদের বিকাশের প্রক্রিয়াটি কীভাবে শুরু হয়েছিল।
এই অনুসন্ধান শুধু মহাবিশ্বের অতীতের দরজা খুলে দিচ্ছে না, বরং আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বিজ্ঞানের দিগন্তকেও প্রসারিত করছে।